
সোশিয়াল মিডিয়া আমাদের জীবনকে দিন দিন রোবটিক্স বা মেশিনারিজ এর মত করে ফেলতেছে, বাইরে থেকে হয়ত এটা আপনি বুঝবেন না অথবা আপনি হয়ত বোঝার চেস্টাও করবেন না। কিন্তু আপনি যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করেন যে আসলে আমাদের জীবনটা আসলে কি? এটাকে আমরা কাটাচ্ছি কিভাবে? এটার শেষটা কেমন হবে?
যদি এখন আপনি একজন যুবককে জিজ্ঞেস করেন তুমার দিন-কাল কেমন যাচ্ছে। সে যদি আপনার বন্ধু হয় তাহলে বললে আজকে আমুক টিকটক করেছি, ফেসবুকে তমুক পোস্ট করেছি, এতটা কমেন্ট আর এতটা শেয়ার পেয়েছি এমন আরো অনেক কিছু। সকল কাজ কর্ম দেখবেন সোশিয়াল মিডিয়াকে নিয়ে।
অথচ আপনি একবার চিন্তা করুন এই সময়ে ঔ প্রশ্নের উত্তরে তার কি বলা উচিৎ। যদি সে পড়াশোনা লেভেলে থাকে তাহলে সেটার কতটুকু উন্নতি হচ্ছে, কি কি সমস্যা তার হচ্ছে বা ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা। আর যদি সে চাকরি করার লেভেলে হয় তাহলে তার বলা উচিৎ সামনে এই কোম্পানির চাকরির পরিক্ষা দিব বা আমি এই নতুন ব্যবসা সম্পর্কে ভাবতেছি তুমি কি বল কেমন হবে?
এখন যদি আপনার মাথায় সারাদিন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক আর ইউটিউব মাথায় গুরে তাহলে অন্য বিষয় গুলো কিভাবে চিন্তায় আসবে? সোশিয়াল মিডিয়া গুলো আমাদের এতটাই ব্যাস্ত করে নিচ্ছে যে আমাদের সময়কে বা জীবনকে আমরা কিভাবে কাটাচ্ছি এই জিনিসটাই মাথায় আনার সময় পাচ্ছি না।
অরো জানুনঃ ওয়েব ৩.০ কি? ওয়েব ৩.০ যেভাবে বিশ্বকে পরিবর্তন করবে। বিস্তারিত
গবেষণা মতে একজন টিনেজার প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ ঘন্টা সময় সোশিয়াল মিডিয়ায় ব্যয় করে অনেকের ক্ষেত্রে তু এটা ১০-১৬ ঘন্টাও হতে পারে।
এবার আসি জীবন নিয়ে, বর্তমান সময়ে মানুষ ৭০ বছরের বেশি খু্ব কম হায়াত পাচ্ছে। আর এখন আপনি যদি ১৫ বছর থেকেই সোশিয়াল মিডিয়ায় ৩ ঘন্টা করে সময় কাটান তাহলে আপনার বাকি ৫৫ বছরে মোট ৪৮১৮০০ ঘন্টার মধ্যে ৬০২২৫ ঘন্টা সময় অযথা শেষ করে দিলেন। যা এই ৫৫ বছরের ৮ ভাগ এর একভাগ। জীবনের প্রথম ১৫ বছর বাদ দিছি কারণ ঐ সময়টা আমাদের ব্রেনের সম্পূর্ণ বিকাশটা হয় না।
যাইহোক সময় দিচ্ছেন ভালো কথা এতে আপনার লাভটা কি? যদি আমি আমার ক্ষেত্রে বলি উত্তর হবে হালকা সস্তা বিনোদন আর কিছুই না। আপনিই নিজেই চিন্তা করুন এটা আপনার ক্ষেত্রে কিসের উপকার হচ্ছে।
আর হে যদি ব্যবসা করেন তাহলে এটা আপনার জন্য সবচেয়ে সেরা মাধ্যম। তখন আপনাকে ব্যবসায় লাভ পাচ্ছেন। সময়টা আপচয় হচ্ছে না।
অথবা আপনি যদি কিছু শিখার উদ্দেশ্যে সোশিয়াল মিডিয়া ব্যবহার করেন তাহলে একবার হিসাব করে দেখুন আপনার পুরা সময়ের কতটুকু শিখার জন্য ব্যয় করেছেন আর অযথা কতটুকু ব্যয় করেছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হল নিজের মনকে কতটুকু শিখার প্রতি ধাভিত করে রাখতে পারছেন। আর আপনি যদি বিনোদনের চিন্তা করে সারাক্ষণ সময় দিচ্ছেন আর দিচ্ছেন আপনার কোন দিকে উপকার হচ্ছে না আর অন্য দিকে মার্ক জাকারবার্গ মিলিয়ন ডলার আয় করতেছে আপনাদের দিয়ে।
আরো জানুনঃ মোবাইল ফোন এর আসক্তি থেকে বেচেঁ থাকার উপায়
এখানে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন যে তাহলে আমরা কি বিনোদন ছেড়ে দিব। যদি আমি আগের সময়ের কথা বলি যখন সোশিয়াল মিডিয়ার এত জনপ্রিয়তা ছিলনা তখন কি মানুষ বিনোদন নিত না। হ্যা, আবশই নিত। তারা তাদের সময়কে একে অপরের সাথে কথা বলে বা বিভিন্ন শারিরীক খেলাধুলা করত। যেটা তাদের শরীরের জন্য যেমন উপকৃত ছিল তেমনি ছিল একটা চিন্তামুক্ত ব্রেন।
আমরা শুধু সোশিয়াল মিডিয়া ব্যবহার করছি এটাই না। এটা আমাদের সেলফ-কন্ট্রোল কে কেড়ে নিচ্ছে। আমাদের মিথ্যে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মিথ্যে প্রতিযোগিতা বলতে আজকে আপনার বন্ধু 5★ হোটেল এ খাবার খেয়ে ফেসবুক এ পোস্ট দিল আপনি চাইবেন তার থেকে ভালো রেস্টুরেন্টে এ খাবার খেয়ে পোস্ট দিতে। আপনার বন্ধু আ্যাপল ১৩ নিছে আপনি চাইবেন ১৪ নিতে। কেউ একজন ভালো ভালো ছবি আপলোড দেয় তাই তার ফলোয়ার ১০০০০ আর আমি দিতে পারি না বলে আমার ১০০।
বন্ধু ভালো স্টাটাস দিয়ে মেয়ে পটায় আর আপনি রিয়েক্ট আর কমেন্ট করে সময় কাটান। এমন আরো অনেক কিছু যা সম্পূর্ণ সোশিয়াল মিডিয়া গুলোকে কেন্দ্র করে হচ্ছে। বাস্তবিক দিক দিয়ে এগুলোর কোন কাজ আছে?
সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এটাকে আমরা ব্যবহার করি কোন গন্তব্য ছাড়া৷ যতক্ষণ যেভাবে ইচ্ছা। আর তাই বর্তমানে আমাদের সমাজে মাদকাসক্ত, আত্মহত্যা ও ডিপ্রেশন এর মত সমস্যা গুলো বাড়তেছে।
আমার কথায় বলি, আজকে ভালো লাগছিল না বলে একটু তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি, অনেক্ক্ষণ ঘুমিয়ে থাকার পড়েও ঘুম আসে না। নিলাম হাতে মোবাইল সাথে সাথে ডুকলাম ফেসবুকে। কিছুক্ষণ পর দেখি একজন একটা মুভি সিরিজ নিয়ে কিছু লিখল। সাথে সাথেই ডোপামিন এর পাল্লায় পড়ে সম্পূর্ণ সিরিজটি দেখতে লাগলাম। সিরিজ শেষ, সময় রাত ৩ঃ৩১. হঠাৎ করে মাথায় আসলো আমি না ১২ টার আগে ঘুমিয়ে যাচ্ছিলাম। তাহলে কেন এতক্ষণ সময় কাটালাম। পড়ে চিন্তা করলাম যে সোশিয়াল মিডিয়া আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করে ফেলতেছে এক মেশিনারি বস্তুর মত। যেটার কোন সুইচ ই তাকে না নিজেকে কন্ট্রোল করার মত।
আরো জানুনঃ সফল হতে এই পাঁচটি অভ্যাস ত্যাগ করুন
তাই মনে হল, সোশিয়াল মিডিয়াই যেহেতু আমার এত ক্ষতি করতেছে, ঠিক তেমনি ক্ষতি করতেছে আরো হাজারো বন্ধু, ভাই এবং প্রতিবেশির। তাই মনে হল এটা নিয়ে কিছু লিখা দরকার। নিজের মধ্যে যা মাথায় আসল তাই লিখে ফেললাম। আপনি কিভাবে মাথায় নিচ্ছেন এটা আপনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার।
শেষে একটা কথায় বলব, জীবনের এই সময়টা সংক্ষিপ্ত। এই জীবনটা হেলে-ধুলে কাটানোর জন্য না। এছাড়া এটা আমাদের জন্য একটা পরিক্ষা। যেটার ফলাফলও আমরা একদিন পাব। সুতরাং, নিজেকে কনট্রোল করার চেস্টা করুন। জীবনের প্রতিটা মূহুর্তকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার চেস্টা করুন।
ধন্যবাদ সময় দিয়ে পড়ার জন্য। আশা করি এই লেখা গুলো নিজেকে পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে। আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকে জানার সুযোগ করে দিতে পারেন।
লিখেছেন: মোঃ আাব্দুররাজ্জাক