
বর্তমান সমাজে এমন অনেক লোক দেখবেন অথবা এমন কিছু লোকের সাথে আপনার কথাবার্তা হবে যারা আপনার সুন্দর জীবনটাকে মুহূর্তের মধ্যেই তছনছ করে দিতে সক্ষম। যারা আপনাকে এমন কিছু বলবে যা আপনার জীবনের সম্পন্ন বাইরে কিন্তু যখন আপনি একবার কথাটা মাথায় নিবেন দেখবেন আপনার সুন্দর জীবনটা অসুখে পরিণত হলো। কথাটা হয়তো অনেকে বুঝতে পারেন নাই।
চলুন আমরা তিনটি গল্প পড়ে আসি। যারা তৃতীয় ব্যক্তির কথা মাথায় নেওয়ার কারণে তাদের কত বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
গল্প -১
দুজন বন্ধু একজন সরকারি কোম্পানিতে আরেকজন বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করে। একদিন বিকালে তারা গল্প করার সময় সরকারি চাকরি করা বন্ধুটি বলল-
– তুমি কোথায় চাকুরি করো?
– একটা কোম্পানিতে ।
– স্যালারি কতো?
– ১০০০০ টাকা।
– মোটে দশ হাজার? চলো কিভাবে?
তোমার মালিক তোমার প্রতি অবিচার করছে। তুমি যেই ছেলে তোমার যা যোগ্যতা, তাতে হেসেখেলেই তুমি অনেক টাকা বেতন পাওয়ার যোগ্য।
যুবকের মেজাজ খাট্টা হয়ে গেলো। নিজের কাজের প্রতি ও বসের প্রতি বেজায় রুষ্ট হয়ে উঠলো।
পরদিন গিয়ে সরাসরি বসকে বেতন বাড়ানোর কথা জানালো। কথা কাটাকাটি হওয়ার একপর্যায়ে বস তাকে চাকরিচ্যুত করলো।
এখন বন্ধুটি বেকার। যদি একবার ভেবে দেখেন যে, সে আগে টিকি ছিল। ১০০০০ টাকা বেতনেই সে কাজ করতেছিল। এখন তার বন্ধুর কথাই নিজেকে আরো বড় করে তুলতে গিয়ে সে আজ বেকার।
আরো পড়ুনঃ মোবাইল ফোন এর আসক্তি থেকে বেচেঁ থাকার উপায়
গল্প -২
দুইদিন আগে তন্নীর প্রথম সন্তান হল। খুশিতে তা স্বামী বাসার সবাইকে খাওয়ার দাওয়াত দিলো৷ তখনি পাশের বাসার এক আন্টি এসে বলতে লাগলো
– তোমার প্রথম সন্তান হলো বুঝি?
– জ্বি।
– তোমার স্বামী এ উপলক্ষ্যে তোমাকে কিছু দেয় নি? উপহার, টাকা বা এ জাতীয় কিছু?
– না। কেন দিবে? এ তো আমাদেরই সন্তান! উপহার বা টাকা দিতে হবে কেন?
– কেন তোমাকে হাত খরচার জন্যেও তো দু’চার পয়সা দিতে পারে। তার কাছে কি তোমার কোনও মূল্য নেই? তুমি চাকরানি?
স্ত্রীর মনে ধরলো কথাটা। সারাদিন কথাটা ভাবতে ভাবতে মনটা বিষিয়ে উঠলো। সত্যিই তো! আমাকে একটা টাকাও কখনো ছোঁয়ায় না।
রাতে কর্মক্লান্ত স্বামী ঘরে ফিরলো।
স্ত্রীর মুখ দিয়ে বোমা বিস্ফোরিত হলো। রেগে গেলো দু’জনে, কথা কাটাকাটি ঝগড়া আর ঝগড়া। পরে হাতাহাতি, শেষ পর্যন্ত তালাকে গিয়ে গড়ালো।
কত সুন্দর করে চলতেছিলো তাদের সংসার। আজ হঠাৎ অন্য জনের সামান্য কথা মাথায় নিয়ে তার সংসারটা নস্ট হয়ে গেল।
আরো পড়ুনঃ ২০২২ এ যে ১০ টি বিষয় শেখা উচিৎ – Todaytrick
গল্প -৩
এক চাচা একদিন সন্ধ্যা বেলায় এলাকার দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন আর এলাকার লোকদের সাথে কথা বলতেছিলেন। একজন আরেকজনের সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ একজন বলে উঠল-
– এই বৃদ্ধ বয়েসে কষ্ট করছেন? ছেলে ঢাকায় থাকে,বড় চাকুরি করে শুনেছি। মস্ত বড় ফ্ল্যাটে বউ-বাচ্চা নিয়ে থাকে। আপনাদের দু’জনকে সাথে নিয়ে যেতে পারে না? আপনাদের দেখতেও তো আসে না!
– না না, ছেলে আমার খুবই ব্যস্ত। টাকা পাঠায় তো। ফোনে ও খোঁজ-খবর নেয় নিয়মিত।
– কী এমন ব্যস্ততা তার শুনি? নিজের জন্মদাতা-জন্মদাত্রীকে দেখতে আসার সময় হয় না?
– সারাদিন অফিস-বাসা করতে করতেই তো তার সবটা সময় চলে যায়!
– আপনি খোঁজ নিয়েছেন? সে ঢাকায় বাড়ি-গাড়ি হাঁকিয়ে বেড়াচ্ছে।
আর আপনারা অজপাড়াগাঁয়ে ধুঁকছেন?
বৃদ্ধ বাবা কথাটা মাথায় নিল এবং বাসায় এসে স্ত্রীকে খুলে বললো।
স্ত্রীও বাধা দিল, আপনি ভুল শুনেছেন। সে আসলেই ব্যস্ত।
– নাহ, সেকি কি মিথ্যা বলতে পারে?
আহা রে! কাকে বুকের রক্ত পানি করে বড় করলাম। এটা ভেবেই করে বসলেন ব্রেইন স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক!
ওই সন্তানের বাবা কিন্তু গ্রামে ভালোই দিন কাটতেছে। আজকে অন্য একজনের কথা শুনে শেষ সঠিকটাকে ভুল বুঝতে শুরু করল এবং দিনশেষে স্ট্রোক করল।
এবার_আসি_মূলকথায়
কিছু নিরীহ-অযাচিত প্রশ্ন আমাদের সুখী জীবনকে ক্ষণিকের মধ্যেই দুঃখী করে দিতে সক্ষম।
আমাদের সমাজে ছদ্মবেশী দরদীরা নিরন্তর শান্ত জীবনে অশান্তির দাবানল জ্বালিয়ে দেয়।
ছদ্মবেশী ডাইন/ডাইনীগুলো নিজের থেকে কিন্তু আপনাকে কিছুই দিবেনা। কিন্তু অন্যের থেকে অবৈধভাবে আদায় করার পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়ে আপনাকে জিতিয়ে দেয়ার নামে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে।
তাই আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করুন যে- জীবনে ৩য় ব্যাক্তি কে প্রবেশ করার সুযোগ দেবেন না। আর যদিও কোন ভাবে ঢুকে যায় তাহলে যথা সম্ভব তার কথা কানে তুলবেন না। ৩য় ব্যাক্তি হতে সাবধান।
এই গল্পগুলো থেকে যদি আপনি কিছু শিখতে পারেন তাহলে অন্যদের কাছে শেয়ার করে তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিন। আর আপনার জীবনে কি এমন ঘটনা কখনো ঘটেছে তা কমেন্টে জানান।