
আমরা প্রত্যেকেই জানি যে, সময়ের সাথে সাথে মানুষের দক্ষতার চাহিদা পরিবর্তন হতে থাকে এবং সেই সাথে পরিবর্তন হতে থাকে চাকরির বাজারের চাহিদাও।
সেই আদি যুগের মানুষরা কখনো কম্পিউটার সম্পর্কে কোন ধারনাই চিন্তা করেনি। তারা কখনো ভাবেনি পৃথিবীতে কম্পিউটার নামক একটি যন্ত্র আবিষ্কার হবে এবং সেই যন্ত্র দিয়ে বড় বড় অসম্ভবকে সম্ভব করা হবে। এরপর যুগের পরিবর্তনের পর কম্পিউটার আবিষ্কার হলো। পৃথিবীর মানুষরা কম্পিউটার সম্পর্কে জানতে শুরু করল।
এভাবে আস্তে আস্তে পৃথিবীর প্রত্যেকে কম্পিউটার নিয়ে জানা শুরু করলো এবং কম্পিউটার এর ব্যবহার শিখতে লাগলো। বর্তমান পৃথিবীতে ছোট থেকে বৃদ্ধ সকলেই কম্পিউটার সম্পর্কে কম–বেশি জানে।
সেই আদি যুগের মানুষরা যেমন চিন্তা করেনি কম্পিউটার সম্পর্কে ঠিক বর্তমান সময়েও যদি আপনি ভাবেন এটা শিখে কি লাভ হবে তাহলে আপনি বড় ভুল করতেছেন। কারণ বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ কাজই কম্পিউটার ভিত্তিতে হচ্ছে। শুধু কম্পিউটার স্কিল নয় বর্তমানে এমন অনেক স্কিলের উদ্ভাবন হচ্ছে যা আগে কখনো কেউ কল্পনাও করে নি।
মূলকথা হচ্ছে আপনি যদি নিজেকে ভবিষ্যতে সুন্দর এবং ভালো ক্যারিয়ারের জন্য যেকোন একটা স্কিল এ দক্ষ হতে চান তাহলে আপনাকে দেখতে হবে বর্তমান চাকরির বাজারের ঐটার চাহিদা কেমন এবং আগামিতে এটার চাহিদা কেমন হতে পারে। এটার ওপর নির্ভর করে আপনাকে যেকোন একটা বিষয়ে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে।
এজন্য আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতেছি এমন ৫ টি বিষয় যেগুলোর ভবিষ্যৎ চাকরির বাজারের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
1. Artificial intelligence & Machine Learning

ধারনা করা হচ্ছে Artificial intelligence (AI) স্কিলটি ভবিষ্যতের সেরা তিনটি স্কিল এর মধ্যে একটি হবে। এছাড়া এটার চাহিদা বর্তমান সময়ে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে আমরা AI এর তৈরি অনেক বিশ্ময়কর উদ্ভাবন দেখতে পাচ্ছি। যার একটি বড় উদাহরণ হচ্ছে বড় বড় কারখানায় কাজ করা রোবট গুলো। যেগুলোতে আসলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মডেল গুলো ব্যবহার করা হয়েছে।
যারফলে তারা সেই কাজগুলোই করতেছে যা আগে বিভিন্ন মানুষের সাহায্যে করা হতো। এক্ষেত্রে এই জায়গায় কাজ করার জন্য যে মানুষ গুলোর প্রয়োজন হত তা এখন হচ্ছে না। এখানে শুধুমাত্র তাদের ই প্রয়োজন হচ্ছে যারা এ রোবট গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে এবং সেগুলোকে দিয়ে যেকোন কাজ সম্পূর্ণ করিয়ে নিতে পারবে।
মেশিন লার্নিং বিষয়টাও অনেকটা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মধ্যে পড়ে। যেখানে অনেক বড় বড় টুলকে বিভিন্ন ল্যাংগুয়েজ মডেলব্যবহার করে একটা সয়ংক্রিয় টুলে পরিবর্তন করা হয়। যেটার একটা বড় উদাহরণ হচ্ছে ChatGPT.
সুতরাং আপনি যদি নতুন কিছু বিষয় নিয়ে শিখতে আগ্রহী হন এবং আপনি যদি টেকনোলজি বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহ আপনার থাকে তাহলে আপনি AI ফিল্ডে যেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ ChatGPT কি? কিভাবে কাজ করে? বিস্তারিত
2. ব্লকচেইন ডেভেলপমেন্ট

প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে প্রত্যেকের চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে। প্রতিটি মানুষের সকল কিছু এখন সকল তথ্য প্রযুক্তির সাথে কানেক্টেড। তাই এখন যে কেউ চাইলে সহজেই সেই ডাটা গুলো এক্সেস নিয়ে নিতে পারে অথবা সেগুলোর পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। তাই এখানে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায়রেখে বর্তমানে অন্যান্য স্কিল গুলোর মত জনপ্রিয় পাচ্ছে ব্লকচেইন ডেভেলপমেন্ট।
ব্লকচেইন ডেভেলপমেন্ট মূলত একটি শেয়ার্ড এবং অপরিবর্তনীয় ডিস্ট্রিবিউটর লেজার টেকনোলজি (DLT) তৈরি করার প্রক্রিয়া। যা আপনার লেনদেনসমূহ নিরাপদে রেকর্ড করে এবং সম্পদ গুলোকে ট্র্যাক করে। সেগুলি ফিজিক্যাল অ্যাসেট ও হতে পারে অথবা নন ফিজিক্যাল ও হতে পারে।
তাই এখানে নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রত্যেকেই তাদের সম্পদ গুলোকে নিরাপত্তার জন্য তারা ব্লকচেইন টেকনোলজি এর দিকে ছুটছে। তাই প্রতিনিয়ত ব্লকচেইন ডেভলপমেন্টে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনিও চাইলে একজন ব্লকচেইন ডেভলপার হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।
3. ডিজিটাল মার্কেটিং

মার্কেটিং বিষয়টা সেই আধি কালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত চলমান এবং এটা পৃথিবী যতদিন চলবে ততদিন এটার প্রয়োজন হবে। কেননা আপনি একজন কোম্পানির মালিক হয়ে কখনোই চাইবেন না যে আপনার পণ্য বা সার্ভিস সমূহ মানুষরা না জানুক।
অন্যদিকে আপনার পণ্য বা সার্ভিস সমূহ মানুষকে জানানোর জন্য অবশ্যই একজন মার্কেটার এর প্রয়োজন। এছাড়া মার্কেটিং বিষয়টা যেমন হিউম্যান বেইজড তেমনি টুল দ্বারা এটাকে করা সম্ভব নয়। আপনি টুল ব্যবহার করে মার্কেটিং বিষয় গুলোকে অটোমেশন করতে পারবেন কিন্তু মার্কেট এনালাইসিস, প্রোডাক্ট এনালাইসিস এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলোর জন্য অবশ্যই একজন এক্সপার্ট মার্কেটার প্রয়োজন।
আপনি যদি চান তাহলে আপনি একজন মার্কেটার হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে তাহলে ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে সহজেই এগুতে পারেন।এছাড়া ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরটা অনেক বড় এখানে অনেক সাব সেক্টরও আছে আপনি চাইলে ছোট্ট একটা সাব সেক্টর নিয়ে কাজ শুরু করে নিজেদের ইনকাম স্টার্ট করে দিতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ ডিজিটাল মার্কেটিং কি? কত প্রকার ও কি কি? digital marketing bangla guidline
4. প্রোগ্রামিং

বর্তমান সময়ের অন্যান্য জনপ্রিয় স্কিল গুলোর মত আরেকটি স্কিল হচ্ছে এই প্রোগ্রামিং। বড় ছোট সকল কাজেই প্রোগ্রামিং প্রয়োজন হচ্ছে। প্রোগ্রামিং ছাড়া নতুন কিছু এখন চিন্তা করা প্রায় অসম্ভব।
তাই আমার সাজেশন থাকবে আপনি যদি কোডিং বিষয়ে আগ্রহী হন এবং প্রবলেমসলভিং এ দক্ষ হন, নতুন কিছু শিখার জন্য যথেষ্ট সময় দিতে পারবেন। তাহলে প্রোগ্রামিং আপনার জন্য সবচেয়ে সেরা স্কিল
তবে এখানে একটা বিষয় আপনাকে জানতে হবে, শুধুমাত্র প্রোগ্রামিং শিখব বলে মাঠে নেমে পড়লে হবে না। প্রোগ্রামিং টা আপনি কি কাজের জন্য শিখবেন তা আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে।
কারণ অনলাইনে অনেক ধরনের প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ আছে। এক-একটা ল্যাংগুয়েজ ভিন্নভিন্ন কাজের জন্য ব্যবহার হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে আবার একটা বড় প্রজেক্ট এর জন্য দুই–তিনটা ল্যাংগুয়েজ একসাথে লাগতে পারে। এজন্য আপনাকে প্রথমে নিশ্চিত করে নিতে হবে যে, আপনি প্রোগ্রামিং শিখে আপনি কোন কাজটা করতে চাচ্ছেন।
যেমন: আপনি যদি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করতে চান তাহলে আপনাকে HTML, CSS, JAVASCRIPT এগুলো শিখতে হবে।
আপনি যদি Data scientists এর মত বিষয় নিয়ে কাজ করে চান তাহলে আপনাকে Python, C, C++ এগুলো শিখতে হবে।
তাই প্রোগ্রামিং শেখার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন এটা শিখে আপনি কোন কাজটা করতে চান।
আরো পড়ুনঃ প্রোগ্রামিং কি? কত প্রকার ও কি কি? (Programming bangla guidline)
5. ক্লাউড কম্পিউটিং

প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের ডাটার সংরক্ষণের নিরাপত্তার বিষয়টিও। প্রত্যেকে এখন চায় তাদের ডাটা গুলো ফিজিকালি সংরক্ষণ না করে অনলাইনে সংরক্ষণ করে রাখতে। আর এই বিষয়টি মাথায় রেখে বিভিন্ন কোম্পানি চালু করতেছে তাদের ক্লাউড কম্পিউটিং সিস্টেম।
ক্লাউড কম্পিউটিং বিষয়টি হলো আপনার ডেটা গুলো স্বয়ংক্রিয় একটি ডিভাইসে বা হার্ড ড্রাইভে না রেখে ক্লাউড সার্ভিস দেয় এমন একটি প্লাটফর্মের কাছে ডাটাগুলো সংরক্ষণ রাখা। বর্তমানে কিন্তু ক্লাউড বিষয়টির জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেখানে আমরাই আগে আমাদের মেমোরি ভর্তি করে রাখতম নিজেদের এবং বন্ধু–বান্ধবের ছবি এবং বিভিন্ন তথ্য রেখে।
সেখানে এখনকার বেশিরভাগ মোবাইলে মেমোরিটাই এমনিতে খালি হয়ে থাকে। প্রত্যেকে এখন তাদের প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো গুগল ড্রাইভের মতো অনলাইন ক্লাউড প্লাটফর্মে সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। আর এইজন্য বর্তমানে Amazon, Microsoft, Google, Alibaba, IBM, Oracle এর মত প্রতিটা বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের ক্লাউডসার্ভিস চালু করে রেখেছে এবং প্রতিনিয়ত এটা চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এজন্য সেই কোম্পানি গুলোর তাদের ক্লাউড সার্ভার মেনেজ করা, গ্রাহকের ডেটা গুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ এবং নিরাপত্তা প্রদান এ সকল কাজের জন্য কোম্পানি গুলো প্রতিনিয়ত দক্ষ কর্মি খুজতেছে।
ভবিষ্যতের সেরা কিল গুলোর মধ্যে এটা একটি থাকবে। সুতরাং আপনি চাইলে ক্লাউড কম্পিউটিং এ দক্ষ হয়ে নিজের একটা সুন্দর ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন।
এগুলোই ছিল সেরা পাঁচটি স্কিল যা ২০২৩ এর জন্য সবচেয়ে ডিমেন্ডেবল। তবে আরো অনেক স্কিল আছে যেমনঃ ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, UI/UX ডিজাইনার। মূলত আমি এখানে ভবিষ্যতে সবচেয়ে বেশি ডিমান্ডেবল থাকবে এমন স্কিল গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি।
শুধুমাত্র ডিমান্ড দেখে যেকোনো একটি স্কেল কে নিজের ক্যারিয়ার হিসাবে নিবেন না। যে কোন স্কিল কে নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার আগে আপনাকে ওই বিষয়ের প্রতি কতটুকু আগ্রহ আছে সেটা আপনাকে দেখতে হবে। আপনি ঔ কাজটা সারাজীবন করে যেতে পারবেন কিনা তা দেখতে হবে।
তা না হলে আপনি প্রথম প্রথম কিন্তু আগ্রহ থাকলেও কিছুদিন পর আপনার সেই বিষয়ে প্রতি আগ্রহটা কমে যাবে। তাই স্কিল নির্ধারণ করার আগে সঠিক সিদ্ধান্ত এবং বুঝে শুনে যেকোনো একটা স্কিলকে ক্যারিয়াররে জন্য বাছাই করে নিবেন এবং সঠিক গাইডলাইন নিয়ে নিজের ক্যারিয়ারকে সুন্দর করে তুলবেন। ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্য