সফলতা জিনিশটা এমনি এমনি অসে না বা এটি কোন পণ্য না যে আপনি কিনে নিতে পারবেন অথবা কারো কাছ থেকে চেয়ে নিবেন। সফলতা পেতে হলে আপনাকে যেমন কঠোর পরিশ্রম করতে হবে টিক তেমনি অনেক গুলো বিষয় ও আপনাকে মেনে চলতে হবে। ২০২২ বছরটা যদি আপনি নিজের জন্য বা নিজের পরবিারের জন্য কিছু করতে না পারেন তাহলে আমার পক্ষ থেকে আপনার জন্য এই ১০ টি সাজেশন আপনার জন্য। নিজের মধ্যে একটা চ্যালেন্জ নিয়ে একটা বছর চেষ্টা করে দেখেন। দেখবেন সফল হতে না পারলেও সফলতা পাওয়ার অনেক রাস্তা আপনার জন্য খুলে যাবে।
আশে-পাশের সবকিছু ভুলে নিজের মন দিয়ে লেখা গুলো পড়ুন আর নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকুন।
১. Focus on your health
ক্যারিয়ার, স্যালারি, প্রোগ্রেস, স্কিল কিছুই কাজে আসবে না যদি আপনি হসপিটালে পড়ে থাকেন অথবা বাসায় বেডে শুয়ে থাকেন। না ঘুমানো, টাইমলি না খাওয়া, এক্সারসাইজ না করা, তেল-ভাজাপোড়া বেশি খাওয়া এইসব নানা যন্ত্রণা করে আমি বিরাট সাফার করছি। ২০২৩ এ সবার আগে ফোকাস দেন Health এবং Healthy Food এ। আর শুধু Physical Health নিয়ে ভাবলেই হবে না। Mental Health শরীরের চেয়ে এক বিন্দুও কম গুরুত্বপূর্ণ না। Stress, Anxiety, Panic ইত্যাদি কমন বিষয় আমাদের জন্য অনেক ভয়াবহ হতে পারে। সময় নিন, মেডিটেশন করুন, ট্যুর দিন মাঝে মধ্যে। আর তাও যদি ইমোশন কন্ট্রোল করতে সমস্যা হয় সাইকিয়াট্রিক থেরাপি নিন।
It’s okay to admit that you are not okay!
২. Choose one certain path
প্রতিটি সেক্টর অনেক ডাইনামিক, প্রতিদিন নতুন চ্যালেঞ্জ, নতুন টুলস আসতেছে। সবই আপনার আস্তে আস্তে শিখতে হবে, জানতে হবে ঠিক আছে। বাট ভাই তার আগে তো নিজের বেইজ স্ট্রং করতে হবে। আগে একটা বিষয়ে সলিড ধারণা অর্জন করতে হবে। যে প্রাইমারি, হাই স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি শেষ করছে সেই তো ডাবল MA করতে পারে। আগে তো ব্যাসিক শেষ করতে হবে। WordPress, LAMP, MERN, Python যা মন চায় তাই শুরু করে দেন। দুনিয়া আপনারা রাইখা আগায়া বহুদূর চলে যাক। আপনার কেয়ার করার দরকার নাই। আপনি যেকোন একটা টপিক নিয়ে ২০২৩ কাটায় দেন। ১ বছর আর কিচ্ছু নিয়ে ভাবতে হবে না। আপনি যেইটা শুরু করছেন ঐটা আগে শেষ দেন। ৫ বছর পর যা শিখতেছেন তা দিয়ে খাইতে পারবেন নাকি এই চিন্তা বাদ দেন। ৫ বছর পর আপনি বাঁচবেন তার নিশ্চয়তা আছে? চেষ্টা আপনার হাতে সেটা করেন, রিজিকের দায়িত্ব অন্য কারো। সুতরাং, টেনশন নেওয়ার কোন দরকার নিই।
৩. Control your social media appearance
ফেসবুকে খেলা নিয়ে ক্যাচাল, রাজনীতি নিয়ে ক্যাচাল, সেলিব্রেটি নিয়ে ক্যাচাল, ধর্ম নিয়ে ক্যাচাল এইসব করে ভাই ব্রাদারের সাথে দূরত্ব ছাড়া আর কিছুই অর্জন করা যায় না। ফেসবুকে আপনি কারো মত চেঞ্জ করতে পারবেন না। কেউ যদি ফেসবুকে বলে দুনিয়া গোল না, দুনিয়া চ্যাপ্টা আপনি কোনভাবেই তার মত ফেইসবুকে চেঞ্জ করতে পারবেন না।
আপনি ২০২৩ এ এইসব ক্যাচালে যাবেনই না। বোরিং বোরিং কাজের জিনিস শেয়ার করবেন, বোরিং বোরিং মানুষদের ফলো করবেন, বোরিং বোরিং কমিউনিটিতে যোগ দিবেন। কারো ফ্যানবয় হবেন না। সকল সিনিয়রকে রেসপেক্ট করবেন।
বর্তমান জামানায় মানুষ আপনার ওয়ালে গিয়ে আপনার এ্যাকটিভিটি দেখে আপনাকে জাজ করে। আমি বলতছি না এইটা সঠিক তবে এইটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটা ইম্প্রেশন ক্রিয়েট করে আপনি টিম মেম্বার হিসেবে কেমন হবেন সেটা নির্ধারণ করতে। সুতরাং এই এক বছর স্যোসাল মিডিয়া একটু নিট এ্যান্ড ক্লিনভাবে ইউজ করেন।
৪. Control your lifestyle
কোনটা Asset আর কোনটা Liability এটা বুজতে হবে। কোনটা
Investment আর কোনটা Waste এইটাও বুঝতে হবে। আমি নিজেও যদি এই পয়েন্টে অনেক স্ট্রাগল করি তবে এখন নিজেকে অনেক কন্ট্রোলে আনতে পারছি। আমরা যদি একদম মিনিমাল লাইফস্টাল, চাহিদায় নিজেদের আনতে পারি তাহলে ‘ইনকাম বন্ধ হয়ে গেলে কি করবো?’ টাইপ ভয় কখনোই আসবে না। প্রোগ্রামিং শুরু করতে আপনার ম্যাকবুক দরকার নাই। স্যোসাল স্ট্যাটাস বাড়াইতেও আপনার iPhone দরকার নাই। অবশ্যই অনেক ‘শখ’ থাকলে আপনি কিনবেন তবে আরো পরে। এখন ১০ টাকা খরচ করলেও হিসাব করে। ফাইনান্স নিয়ে পড়ালেখা করেন। চাওয়া মানেই দরকার না এটা বুঝতে হবে ভাই।
৫. Read, Read and Read
বই পড়েন। প্রচুর বই পড়েন। অন্তত ২ টা বই মাসে পড়ার ট্রাই করেন। Self-help বই যেমন পড়বেন তেমন সাহিত্যও পড়বেন। আমরা ক্যারিয়ার, গ্রোথ এইসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে ক্লাসিক সাহিত্য, ধর্মীয় ইতিহাস, মানুষ, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে একদম উদাসীন হয়ে গেছি। অথচ দেখেন আপনি কিন্তু প্রতিদিন কম পড়েন না। ফেসবুকে ২-৩ ঘণ্টা পড়েন। এই পড়াটাই ২০২৩ এ কাগজে পড়বেন। PDF পড়ার কথা বলি নাই কিন্তু। ঐসব তাদের জন্য যারা পড়তে পড়তে পড়াতে Pro হয়ে গেছে। আপনি সলিড কাগজের বই পড়বেন। বেস্ট হয় সকালে ঘুম থেকে উঠে রোদে গিয়ে ৩০ মিনিট পড়তে পারলে। ভিটামিন ডি এবং মগজে ধার দুইটাই পাওয়া গেলো! আর অনেক এ্যাপ আছে যেইটা দিয়ে এই রিডিং ট্রাক করতে পারবেন। ইউজ করতে পারেন সেগুলো।
৬. Never compare or complain
এই ২০২৩ এ শেখার ক্ষেত্রে কখনোই কম্পেয়ার বা কমপ্লেন করবেন না। আরেকজন বিরাট এ্যাপ্লিকেশন বানায় ফেলছে আর আপনি এখনও ক খ গ ঘ শিখতেছেন? সমস্যা নাই। থাক না। অনেকে অনেক কিছু করে ফেলবে। তারা এফোর্ট দিছে, তাই পারতেছে। আপনি তার সমান এফোর্ট না দিয়ে জাস্ট তার মত রেজাল্ট চাইলে হবে? একটা কথা মাথায় রাখবেন,
“এই দিন দিন না আরো দিন আছে,
এই দিনেরে পাইবা তুমি সেই দিনেরও কাছে”
আপনার সময় আসবে। অনেক বড় কিছু করবেন। আজ রোনালদো আল-নাসেরে গেছে জন্য কোডিং করবো না। আজ মেসি কাপ নিছে জন্য কোডিং বাদ এইসব ফাউ এক্সকিউজ বাদ। ওমুক স্যার ভাল পড়ায় না, ওমুক কোর্স ভাল না জন্য আমি শিখি নাই এইসব কমপ্লেইন কইরা কোন ফায়দা নাই ম্যান। জাস্ট ঝাড়া দিয়ে ওঠেন এবং কোড করেন। সব কম্পেয়ার, সব কমপ্লেন হবে ২০২৪ এ। যখন পায়ের নিচে মাটি থাকবে। মজার ব্যাপার হলো তখন আরো কমপ্লেন এবং কম্পেয়ার করতে মন চাবে না।
করিম বেনজেমার একটা ছবি দেখছিলেন না? সবাই ট্রফি নিয়ে আর পেছন থেকে তালি দিচ্ছিলো? তেমন হয়ে যান। আজ তালিই দেন সবার সাকসেসে মন থেকে। আপনারও সময় আসবে। শুধুমাত্র সেই সময়টার জন্য কাজ করে জান।
৭. Showcase your work
আপনি ২০২৩ এ রেগুলার যে কাজগুলো করবেন সেগুলো আপনি
YouTube, Blog, LinkedIn, Facebook, GitHub যেকোন জাগায় শোকেজ করতে পারেন। শেয়ার করতে পারেন। YouTube এ যে আপনার টিউটোরিয়ালই বানাইতে হবে মোটেই তা না। আপনার শেখার জার্নির ব্লগও বানাইতে পারেন। ৩৬৫ দিনে ২০০ টা ভিডিও বানাইলেও আপনার কমিউনেশন স্কিল কোন লেভেলে যাবে ভাবতেছেন? আপনি হয়তো ভাববেন, আরে ভাই চ্যানেল বা ব্লগ এর জন্য অনেক জানা লাগবে। আপনি কখনোই রেডি হবেন না। আজীবন নলেজের অভাব থাকবেই। জাস্ট শুরু করতে হবে। নিজের জন্য। নিজেকে পুশ করার জন্য। নিজের কাজকে জানানোর জন্য। গঠনমূলক ফিডব্যাক নেয়ার জন্য। অনেক সময় নেগেটিভ কথাও হজম করার জন্য। শুরু করাটাই ইম্পর্টেন্ট। আপনি দুনিয়ার সেরা ডেভেলপার তবে আপনি থাকেন গুহায় তাহলে হবে? আপনাকে গুহা থেকে কেউ বের করবে না। আপনারই হতে হবে।
৮. Expand your network
বর্তমানে যে এফোর্ট আমরা ফেসবুকে ফাউ তর্কে দেই সেইটা দিবো নেটওয়ার্কিং এ। নেটওয়ার্কিং মানে এই না যে বড় ভাইদের নক দিয়ে দিয়ে “ভাই আমি আপনার ফ্যান” বলবেন, ডেইলি পোস্টে কমেন্ট করবেন লাভ ইমোজি দিয়ে। নো! এটা নেটওয়ার্কিং না। মানুষকে হেল্প করেন, কমিউনিটি ইভেন্টগুলোতে যান। (আমি নিজে যাই না কারণ ১ নাম্বার পয়েন্টে আগে জোর দেই নাই)। আপনার কাজগুলো মানুষকে দেখান। ফিডব্যাক নেন। ইম্প্রুভ করেন। মানুষকে হেল্প করেন। ভাই ব্রাদারদের অফিসে জান। একটা বই গিফট হিসেবে নিয়ে যান। তাদের সাজেশন নেন, গাইডলাইন নেন, আপনার প্রশ্ন থাকলে গুছায়া করেন। একদিন দুইদিন পরে হয়তো তারা রিপ্লাই দিবে, আপনাকে সময় দিবে। সমস্যা নাই মেনে নেন। ইগো ঝাইড়া ফালায় দেন। ২০২৩ এ আপনি সবার ছাত্র। শিখতে থাকেন। নেটওয়ার্ক বড় করেন। এই নেটওয়ার্কিং ভয়াবহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। এইটা ছাড়া ক্যারিয়ারে আপনি আগাইতে পারবেন না। ট্রাস্ট মি এইটা স্কিলের চেয়েও মাঝে মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
৯. Enjoy the journey
ধরেন আপন সাজেক যাবেন। সাজেকের মূল আনন্দ কিন্তু শুধু পাহাড়ের উপরে ওঠাই না। ঐ পাহাড় পর্যন্ত যাওয়ার জন্য চান্দের গাড়ির যে অসাধারণ জার্নি এইটাও কিন্তু মজার! আপনি শুধু লাস্ট স্টপে জাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে জার্নি ইগনোর করলে খুব দ্রুতই মোটিভেশন হারায় ফেলবেন। সারাক্ষণ যদি “ফিউচারে” বসে থাকেন যে, আমি কাজ শিখে এই করবো, এত ডলার কামাবো, এই কোম্পানি তে যাবো তাইলেই আমি সেটেল, তাইলেই আমি হ্যাপি তাহলে আপনি এই র্যাট-রেসে আজীবন পরাজিতই হবেন।
এনজয় করেন। স্কুলে থাকতে কত চাইতেন কবে পড়ালেখা শেষ হবে। এখন তো শেষ করছেন। তাইলে এত মিস করেন কেন? এখন জার্নি এত মনে পড়ে কেন? এনজয় করেন জার্নি। এমন কোন সকাল নাই যে সকালে উঠেই আপনি ডেভেলপার। একবার যদি জার্নিটা ভালোবাসতে পারেন তাহলে মোটিভেশন এর জন্য এত বড় বড় স্ট্যাটাস আর জীবনেও পড়া লাগবে না!
১০. Maintain Time & Stay Focused
আমরা ১০ টা টাকাকে যেমন গুরুত্ব তেমনি আমাদের মধ্যে থেকে ১০ মিনিট চলে যাওয়াটাকেও আপনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। সময়কে শুধুমাত্র গুরুত্ব দিলে হবে না। সময়কে আপনার কাজের জন্য ব্যয় করতে হবে। সবাই বলে সময় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি বলব সময়ের চেয়ে ফোকাস আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার মধ্যে যদি সঠিক মনযোগ থাকে আপনি ১ ঘন্টার কাজ আপনি ৩০-৪০ মিনিটেই শেষ করে পেলতে পারবেন। আর যদি মনযোগ না থাকে আপনি ২ ঘন্টায়ও শেষ করতে পারবেন কিনা জানিনা।
আপনার কাছে সময় আছে আপনি সেটাকে যদি গেম খেলে বা মুভি দেখে শেষ করে ফেলেন তাহলে সেটা কি কোন আর কাজে আসল। তাই সবসময় সময়কে যেমন গুরুত্ব দিবেন তেমনি গুরুত্ব দিবেন নিজেকে ফোকাস রাখার জন্য।
এই সববিষয় যেহেতু আপনি পরছেন তাহলে আপনি অবশ্যই নিজেকে সফল করতে চান। শুধু পড়লেই তু হবে না আপনাকে সেই অনুযায়ী মেনেও চলতে হবে। যদি এটা আপনার জন্য উপকারী মনে হয় তাহলে নিজের বুকমার্ক এ সেভ করে রাখেন আর প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওটে একবার করে পড়ে নিবেন। আমার দেওয়া সাজেশন গুলো আপনার কাছে কেমন লাগছে কমেন্ট করে জানান আর আপনার অলস বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
২০২৪ এ আপনার সফলতার গল্প শোনার অপেক্ষাই রইলাম। মনে সাহস রাখেন আর চেস্টা করতে থাকেন। আপনার জন্য শুভ কামনা।