
বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। সেই সাথে যুবকদের মধ্যেও আগ্রহ বেড়েছে নিজেকে একজন সফল ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে গড়ে তু্লার। আজকের এই আর্টিকেল এ আমি আপনাদের সাথে এমন কিছু পয়েন্ট শেয়ার করব যা আপনাকে সঠিকভাবে সফল ডিজিটাল মার্কেটার হতে সাহায্য করবে।
সঠিক সেক্টর নির্ধারণ
ডিজিটাল মার্কেটিং এর সেক্টরটা এত বড় যে আপনি যদি একাধারে দুই থেকে পাঁচ বছর একাধারে শিখতে থাকেন তাহলে আপনি সম্পূর্ণ শেষকরতে পারবেন না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হল আমাদের ধৈর্য। আমাদের ধৈর্য সক্তি এতটাই কম যে আমরা মুখে বললেও বাস্তবিকতায় পড়ে আমরা আমাদের ভিতরের চিন্তা–ধারাকে কন্ট্রোল করতে পারি না। যার ফলে আমার হতাশ হয়ে আমরা ধৈর্য হারা হয়ে যায়।
বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন এমন বিজ্ঞাপন আমাদেরকে দেখানো কয় যেখানে ইন্টারনেট এ ফ্রিল্যান্সিং মানেই হাজার হাজার ডলার আয় অথবা দেখা যায় কেউ একজন ভালো পরিশ্রম করে ভালো একটা এমাউন্ট সে ইনকাম করেছে। এরপর আমরা ভাবি যে সে ঐ কাজটা করে এতটাকা কামাচ্ছে আমিও ঐ কাজটা করব। এমন আরো অনেক কিছু আমাদের ব্রেনের চিন্তা–ধারাকে মুহুর্তেই পরিবর্তন করে ফেলে। যার ফলে বেশিরভাগই সফল মার্কেটার হতে চাই টিকি কিন্তু শিখার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে না।
তবে এখানে এই সেক্টরটা বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমনঃ সোশিয়াল মিডিয়া মার্কেটিং, সার্চ ইন্জিন মার্কেটিং, সার্চ ইন্জিন অপ্টিমাইজেশন, মার্কেট এনালাইসিস, ভাইরাল মার্কেটিং সহ আরো অনেক অনেক সেক্টর। তবে বর্তমানে সোশিয়াল মিডিয়া মার্কেটিং এবং সার্চইন্জিন অপ্টিমাইজেশন চাহিদা সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। আপনি চাইলে এমন একটা ছোট্ট সেক্টর কে দিয়ে আপনার মার্কেটার হওয়ার যাত্রাটা শুরু করতে পারেন। এখানে আপনি যদি একটা নির্দিষ্ট সাব সেক্টর এ অন্তত ছয় মাস সময় দেন। তাহলে আপনি মোটামুটি লেভেলের এক্সপার্ট হয়ে যাবেন ঐ বিষয়ে কাজ করার জন্য।
পরবর্তীতে আপনি আপনার ইচ্ছামত বা প্রয়োজনমত অন্যান্য স্কিলে নিজেকে দক্ষ করতে পারবেন। যেমনঃ যারা সোশিয়াল মিডিয়া মার্কেটিং এর কাজ করে তারা অনেকেই পোস্টার ডিজাইন, ফ্লায়ার ডিজাইন, এ্যাড ব্যানার ডিজাইন এমন কাজ গুলো শিখে। আবার যারা সার্চ ইন্জিন অপ্টিমাইজেন এর কাজ করেন তারা আস্তে আস্তে ওয়েবসাইট অপ্টিমাইজেশন, ওয়ার্ডপ্রেস কাস্টমাইজেশন এমন বিষয়ে তারা আস্তে আস্তে শিখতে শুরু করে। এভাবে আপনি শুরুটা ছোট্ট একটা সেক্টর দিয়ে শুরু করে পরবর্তীতে আপনি আপনার প্রয়োজন মত অন্য সেক্টর এ দক্ষ হয়ে কাজ করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ ডিজিটাল মার্কেটিং কি? কত প্রকার ও কি কি? digital marketing bangla guidline
নিজেকে আপডেট রাখা
ইন্টারনেট এ প্রতিটি জিনিসের পরিবর্তন এত দ্রুত দ্রুত ঘটতেছে। যা আমরা কখনো কল্পনা ও করি না। সাধারণত প্রতিটা কোম্পানিই চাই যে তাদের ব্যবহার কারিদের সবচেয়ে সেরা সুবিধাটা দিতে। যেমনঃ আমি এখানে পড়ার সুবিধার্তে লিখার সাইজটা সাধারণ থেকে একটু বড় করেদিয়েছি এবং আরো সুবিধার্তে সম্পর্কনীয় কিছু আর্টিকেল মাঝে মাঝে লিংক করে দিয়েছি।
এভাবে বড় বড় কোম্পানি গুলোও তাদের ওয়েবসাইট এবং এ্যাপস এ প্রতিনিয়ত আপডেট আনে। যাথে তারা আগের থেকে আরো একটু ভালো সুবিধা দিতে পারে। তবে আমি এখানে আপনাকে সফটওয়্যার আপডেট এর মত আপডেট হতে বলতেছিনা। আমি এমন আপডেট আপনাকে হতে বলেছি যা না হলে আপনি আপনার ঐ সেক্টরের কম্পিটিশনে হেরে যাবেন।
যেমনঃ আপনি ফেসবুক এ্যাডস নিয়ে কাজ করেন। এখন ফেসবুক তাদের সিস্টেমে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে, তাদের ক্রিয়েটর স্টোডিওকে মেটা স্টোডিওতে পরিবর্তন করেছে। এখানে অনেকের মূল সমস্যা হয় যে আপনার প্রয়োজনীয় বিভিন্ন অপশন খুঁজে পেতে একটু ভিতরে বা একটু ঘাটাঘাটি করতে হয়। এখন আপনার কাজটা সম্পূর্ণভাবে করার জন্য ঐ অপশনটা খুঁজে বের করতে হবে। আপনি না খুঁজে নরমালি ভাবে কাজটা সম্পন্ন করে ফেললেন। এতে আপনি কিন্তু আর আগের মত ভালো ফলাফলটা পাচ্ছেন না।
অন্যদিকে যে ঐ বিষয় খুঁজে নিয়ে ঐটার ব্যবহার সঠিকভাবে জেনে কাজটা করল সে কিন্তু ঠিকই ভালো রেজাল্ট পেল। এখানে আপনি কিন্তু তার কাছে হেরে গেলেন। এজন্য এমন কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে যে বিষয়ে নিজের স্কিলকে আপডেট করা জরুরী হয়ে পড়ে। তাই আপনার কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জিনিস গুলোর মধ্যে কোনটার পরিবর্তন এসেছে তা খুঁজে নিয়ে যতদূত সম্ভম নিজেকে আপডেট করে ফেলতে হবে।
মার্কেটিং এ নিজেকে আপডেট রাখতে যে ব্লগ গুলো ফলো করতে পারেন
- Digital Marketing Institute
- Orbit Media Blog
- Hubspot Blog
- Neil Patel Blog
- Search Engine Land
- Search Engine Journal
- Smart Insights Blog
- BuzzSumo Blog
- Buffer Blog
- Content Marketing Institute
আরো পড়ুনঃ ChatGPT কি? কিভাবে কাজ করে? বিস্তারিত
টুলস সম্পর্কে ধারণা রাখা
আমরা সকলেই জানি যে টুলস আমাদের জিবনের সকল কাজ কতটুকু সহজ করে দিচ্ছে। টুলসের ব্যবহার আমাদের কাজকে আরো সহজ, আরো নিখুঁত এবং সবচেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে করতে সাহায্য করে। ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করার সময় অনেক টুলস এর প্রয়োজন হয়। এখন আপনি যদি প্রয়োজনীয় বিভিন্ন টুলস সম্পর্কে না জানেন তাহলে আপনি আপনার কাজের গতিকে বৃদ্ধি করতে পারবেন না। এছাড়া ঐ সব টুল থেকে যেসুবিধা গুলো পাবেন তা পাবেন না। এক্ষেত্রে আপনি অন্যান্য এক্সপার্টদের থেকে পিচিয়ে পড়বেন। এজন্য আপনি যদি ঐসব টুলস এর সম্পর্কে এগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে অবশ্যই ধারণা রাখতে হবে।
টুলস কিভাবে আমাদের কাজ সহজ করে
আমি আপনাদের একটা সহজ উদাহরণ দিয়ে বুঝায়, মনে করুন আপনি একটা অনলাইন মার্কেটিং কোম্পানি। এখন আপনি চাচ্ছেন আপনার নতুন নতুন সিস্টেম, স্ট্রাটেজি সমূহ আপনার সাথে সংযুক্ত ব্যবহারকারীদের কাছে পৌছাতে। ধরুন আপনার ব্যবহারকারীর ইমেইল লিস্টে ১হাজার ইমেল আছে। এখন আপনি যদি তাদের সবাইকে সাধারণ নিয়মে মেইল পাঠাতে ছান তাহলে আপনাকে ১০০০ মেইল লিখে, মডিপাই করে তারপর একটা একটা করে পাটাতে হবে। এখন আপনি যদি যেকোন একটি ইমেইল সেন্ডার টুলস ব্যবহার করেন তাহলে আপনি একক্লিক এ সবাইকে একসাথে মেইল পাটিয়ে দিতে পারতেছেন। এতে আপনার সময় ও পরিশ্রম দুইটাই বেছে যাচ্ছে।
মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় টুলস
আরো পড়ুনঃ ২০২৩ এ যে ৫ টি স্কিল আপনার শিখা উচিৎ
ট্রেন্ড সম্পর্কে ধারণা রাখা
ট্রেন্ড বিষয়টা এতটা গুরুত্বপূর্ণ যে এটা যদি আপনি বুঝে সঠিকভাবে একবার কাজে লাগাতে পারেন তাহলে আপনি যেটাই করেন না কেন ঐটার সেরা রেজাল্ট টা আপনিই পাবেন। বর্তমানে এমন হয়ে গেছে যেখানেই যান বা যেটাই করেন সবাই শুধু ট্রেন্ডিং বিষয়টা খুজে। এখন আপনি এমন একটা কিছু নিয়ে কাজ করতেছেন যেটা প্রতিনিয়ত অন্যরা খুঁজে বেড়াচ্ছে তাহলেই তু আপনি বুঝতেই পারছেন এটার রেজাল্ট কেমন হবে।
ট্রেন্ড আবার অনেক ধরনের হয়ে থাকে। কিছু আছে সমসাময়িক ট্রেন্ড আবার কিছু আছে লং–টার্ম।
সমসাময়িক ট্রেন্ড
সমসাময়িক ট্রেন্ড বলতে সাধারণত স্বল্প সময়ের জন্য যে ট্রেন্ড ঘটে সেটাকে বুঝানো হয়। যেমনঃ মনে করুন, আজকের একটা ভাইরাল খবর হচ্ছে কোন এক হ্যাকার ফেসবুক সার্ভার হ্যাক করে ১ কোটি ব্যবহারকারীর তথ্য অনলাইনে ছেড়ে দিয়েছে। এখন এই ভাইরাল খবরটা জানতে সবাই অনলাইনে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আপনি এটা নিয়ে একটা ভিডিও অথবা একটা ব্লগ শেয়ার করলেন। যার ফলে প্রচুর ভিউজ বা ট্রাফিক পাচ্ছেন।মূলকথা হচ্ছে, এই যে ভাইরাল খবরটা কিন্তু মানুষ সর্বোচ্চ ৩–৭ দিন পর্যন্ত খুজবে। এর পরবর্তীতে সকলেই এই বিষয়টা ভুলে যাবে। এই যে অল্পসময়ের একটা হাইপ সৃষ্টি হল তাই সমসাময়িক ট্রেন্ড।
আরো পড়ুনঃ ৭ টি অভ্যাস যা আপনার জীবনকে সফল করবে
লং–টার্ম ট্রেন্ড
লং–টার্ম ট্রেন্ড বলতে এমন একটা ভাইরালিটিকে বুঝানো হয় যেটার সবসময় একটা হাইপ থাকবে। হয়ত কখনো কম বা কখনো বেশি। এমন একটা উদাহরণ হচ্ছে, ১ম বিশ্ব–যুদ্ধ। যেটা শেষ হয়েছিল ১৯১৮ সালে। কিন্তু এখনো প্রতিনিয়ত জানার জন্য মানুষ অনলাইনে খুঁজে বেড়াচ্ছে। এই ধরনের ভাইরালিটি হল লং–টার্ম ট্রেন্ড।
নিজের নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করা
নেটওয়ার্ক জিনিসটা কতটুকু মূল্যবান তা আমি আপনাকে লিখে বুঝিয়ে শেষ করতে পারব না। এককথায় বললে আপনার নেটওয়ার্ক যত বড় হবে আপনি ততবেশি যেকোন কাজে সহজে এগিয়ে যেতে পারবেন।
নেটওয়ার্ক কেন গুরুত্বপূর্ণ
আপনাকে মার্কেটিং এ বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন মানুষের সাথে সংযুক্ত হতে হবে। মনে করুন, আপনার একটা প্রজেক্টের যেকোন একটা কাজেরজন্য আপনাকে দেশের বড় একটা মার্কেটিং টিম এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এখন যদি ঐ টিমের কারো সাথে আপনার কানেক্টিভিটি থাকে তাহলে কাজটা খুবই সহজ হয়ে গেলো। তা না হলে আপনাকে বিভিন্ন ভাবে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হতো। যেটা করা অত্যান্ত সময়ের এবং কষ্টসাধ্য কাজ। সময়ের সাথে বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন মানুষের সাথে আপনাকে কানেক্টেড হওয়ার প্রয়োজন পড়ে। তাই নিজের একটা বড়সড় নেটওয়ার্ক থাকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুনঃ ২০২৩ এ সফল হতে চান? ১০ টি বিষয় মেনে চলুন
রিসার্চ করার ক্ষমতা থাকা
মার্কেটিং এর বেশিরভাগ কাজই হল রিসার্চের। আপনি যত বেশি রিসার্চ করতে পারবেন অথবা নতুন নতুন বিষয় খুঁজে বেড় করে নিতে পারবেন ততবেশি আপনি মার্কেটিং এ ভালো করতে পারবেন।
এখন আপনার যদি কোন বিষয়ে রিসার্চ করার, নতুন বিষয় খুঁজে বের করার অথবা যেকোন বিষয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে তথ্য বের করে আনার ক্ষমতা না থাকে তাহলে আপনি মার্কেটিং এ বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারবেন না। এজন্য আপনাকে যেকোন বিষয়ে একদম গভিরভাবে রিসার্চ করার অথবা যেকোন তথ্য সহজে বের করার বিষয়ে যথেস্ট দক্ষতা থাকতে হবে।
এই চিল কিছু পয়েন্ট নিজেকে সফল মার্কেটার হিসেবে তৈরী করার। এছাড়া আরো অনেক উপায় আছে বা বিভিন্ন উপায় আছে যা দিয়েও নিজেকে একজন দক্ষ মার্কেটার হিসেবে তৈরী কর ফেলতে পারেন।
🎯যেকোন বিষয়ে সফল হওয়ার জন্য কোন বিষয়টা সবচেয়ে জরুরী, আপনার মতামত কমেন্ট করে জানান।