
ফেসবুক বর্তমান বিশ্বের এক নাম্বার সোশিয়াল মিডিয়া প্লাটফর্ম এবং বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর মধ্যে একটি। আমরা সবাই মনে করি যে সোশিয়াল মিডিয়া গুলো শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোকে ঘিরে লক্ষ্য লক্ষ্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, শুধু ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানই নয়, এসব মাধ্যম গুলোকে ব্যবহার করে অনেকে অনেক ধরনের কাজকর্ম শুরু করে দিয়েছে, অনেকেই তু শুধুমাত্র সোশিয়াল মিডিয়াকেই নিয়ে নিজের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করে ফেলতেছ।
আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব শুধুমাত্র ফেসবুককে ব্যবহার করেই কিভাবে ইনকামের বিভিন্ন মাধ্যম তৈরী করবেন বা কত ধরনের উপায়ে আপনি ফেসবুক থেকে আয় করতে পারবেন। এসব নিয়ে বিস্তারিত।
ভিডিও থেকে আয়
ফেসবুকে ছবি, লেখা এবং আরো অন্যান্য কিছুর পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে। শুধু ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে এমনই না ফেসবুক এখন তাদের ক্রিয়েটরদের তাদের কনটেন্ট এর বিনিময়ে টাকাও দিচ্ছে যার ফলে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফেসবুকে ভিডিও থেকে আয় করার জন্য কয়েকটা কাজ করতে হবে।
প্রথমত আপনাকে একটি পেইজেই ভিডিও গুলো আপলোড করতে হবে। কারণ, ফেসবুক পেইজ থেকেই মূলত আপনার আর্নিংটা হবে।
শুধুমাত্র পেইজে ভিডিও আপলোড করলেই হবে না। আপনাকে প্রথমে পেইজে মনিটাইজেশন চালু করতে হবে ভিডিও থেকে আয় শুরু করার জন্য।
ফেসবুক কিন্তু সকল পেইজে মনিটাইজেশন দেয় না। মনিটাইজেশন পাওয়ার জন্য তাদের কিছু শর্ত আছে যেগুলো পূরন করতে হবে। শর্তগুলোহচ্ছে –
শেষ ৬০ দিনের মধ্যে আপনার ভিডিও গুলো ৬০০০০০ মিনিট দেখতে হবে।
আপনার পেইজে সর্বনিম্ন ৫ টি ভিডিও থাকতে হবে,
এবং পেইজে সর্বনিম্ন ১০০০০ ফলোয়ার থাকতে হবে।
এইসব শর্ত পূরণ হলে আপনি ফেসবুক এ মনিটাইজেশন এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এরপর তারা আপনার পেইজটি চেক করে আপনার পেইজে মনিটাইজেশন চালু করে দিবে।
পরবর্তীতে যখন ব্যবহারকারীরা আপনার ভিডিও গুলো দেখবে সেখানে যখন এ্যাড চলবে তখন ফেসবুক আপনাকে পেমেন্ট করবে।
আপনি হয়ত ভাবতেছেন এটা তু অনেক কঠিন একটি কাজ। কিন্তু আপনি যদি একটু ভালো করে চিন্তা করে দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে আপনি যদি ১০ মিনিট করে ৫ টা ভিডিও আপলোড দেন এবং ভিডিও গুলো যদি ১০০০ মানুষ করেও দেখে তাহলে আপনার ৫০০০০ মিনিট কমপ্লিট হয়ে যাবে ।এছাড়া ফেসবুক একটা ভিডিও ভাইরাল হলে সেটা তু লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখবে।
এভাবেই হাজার হাজার কনটেন্ট ক্রিয়েটররা ভিডিও আপলোড করেই ফেসবুক থেকে আয় করতেছে।
রিলস থেকে আয়
উন্নত প্রযুক্তির ডিজিটাল এই সময়ে ইন্টারনেট জুড়ে কনটেন্ট এর পরিমাণ এত বেশি হয়ে গেছে যে ব্যবহারকারীগণ এখন আর বেশি সময়ের ভিডিও দেখতে পছন্দ করে না। এখন প্রত্যেকেই সর্ট ভিডিও গুলোকে সবচেয়ে বেশি দেখতে থাকে। যার ফলে ইউটিউব, ফেসবুক এর মত বড় বড় কোম্পানি এবং ইন্টারনেট জুড়ে থাকা সকল সোশিয়া মিডিয়া মাধ্যম গুলোতে সর্ট ভিডিও এর সিস্টেম যুক্ত করতেছে।
ফেসবুক তাদের ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুকের সর্ট ভিডিও গুলোকে একসাথে রিলস হিসেবে ব্যবহারকারীদের সামনে দেখাচ্ছে। ব্যবহারকারীরা যেভাবে রিলস গুলো পছন্দ করতেছে সেভাবে রিলস তৈরি করা লোকের সংখ্যাও বাড়াতে হবে। এরজন্য তারা রিলস থেকেও আয়ের সিস্টেম চালু করেছে। এখন আপনি চাইলে শুধুমাত্র রিলস ভিডিও আপলোড করেই ফেসবুক থেকে আয় করতে পারবেন।
তবে এখানেও তাদের কিছু শর্ত আছে। রিলস থেকে আয় করার জন্যও আপনাকে মনিটাইজেশন বা তাদের পার্টনার প্রোগ্রাম এ এলিজিবল হতে হবে। সর্ট ভিডিও এর পার্টনার প্রোগ্রাম এ এলিজিবল হওয়ার জন্য আপনাকে যে শর্ত গুলো পূরণ করতে হবে।
আপনার একাউন্টটি অবশ্যই ৩০ দিনের পুরাতন হতে হবে।
আপনার একাউন্টটে শেষ ৩০ দিনে সর্বনিম্ন ৫ টি রিলস ভিডিও আপলোড করা থাকতে হবে।
শেষ ৩০ দিনের মধ্যে আপনার রিলস গুলো সর্বনিম্ন ১০০০০০ মানুষের দেখতে হবে।
এরপর আপনি তাদের কাছে পার্টনার প্রোগ্রাম এর জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং তারা আপনার একাউন্টটি চেক করে আপনাকেমনিটাইজেশন দিবে। এরপর আপনার ভিডিও গুলোতে যখন এ্যাড চলবে তখন ফেসবুক আপনাকে আপনার একাউন্ট এ ডলার যুক্ত করতেথাকবে।
এভাবে আপনি শুধুমাত্র রিলস ভিডিও আপলোড করেই ফেসবুক থেকে আয় করতে পারবেন।
আরো জানুনঃ ২০২৩ এ সফল হতে চান? ১০ টি বিষয় মেনে চলুন
মার্কেটপ্লেস থেকে আয়
আমাদের মধ্যে অনেক মানুষ আছেন যারা ব্যবসা করতে চান, কিন্তু পুজি এবং বড় অংকের খরচের কারনে তারা আর ব্যবসা শুরু করতে পারেনা। কিন্তু বর্তমানের এই সোশিয়াল মিডিয়া গুলোই এক একটি বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফেসবুকে পণ্য কেনা–বেচা করার জন্য ফেসবুক কোম্পানি আলাদাভাবে মার্কেটপ্লেস তৈরি করে রেখেছেন।
যেখানে আপনি আপনার পছন্দ মত যেকোনো পণ্য কিনতে ও বিক্রি করতে পারবেন। গ্রাহকগণ প্রতিনিয়ত মার্কেটপ্লেসে গুড়ে বেড়াচ্ছে তাদের পছন্দের পণ্য খুঁজে বের করতে এবং ক্রয় করতে।
মজার ব্যাপার হল এখানে আপনাকে একটাকাও খরচ করতে হবে না বা মাসিক কোন ভাড়াও দিতে হবে না।
সুতরাং, কিসের জন্য বসে আছেন শুরু করে দিন আপনার পছন্দের কাজটি, একদিন দেখবেন আপনি যে পরিমান টাকা আয় করার চিন্তা করেছিলেন তার থেকেও কয়েকগুণ বেশি আয় করতে পারবেন।
পেইজ থেকে আয়
একটা ফেসবুক পেইজ থেকে যে কতভাবে আয় করা সম্ভব তা বলে বুঝাতে পারবো না। তবে আমি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে বলতেছি যেটার মাধ্যমে আপনি একটা পেইজ থেকেই প্রতিমাসে একটা ভালো পরিমাণের অর্থ আয় করতে পারবেন।
আমি যে পদ্ধতিটার কথা বলতেছি তা হল ব্যবসা করা। একসময় মানুষ ভাবত এসব তু আনন্দ আর সময় কাটানোর মাধ্যম, কিন্তু এসব মাধ্যম যে এত বড় বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এ পরিণত তা বর্তমানে আমরা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছি। অনলাইনে এমন সব জিনিস আঙুলের কয়েক ক্লিকে খুঁজে পাওয়া যায় যা অফলাইনে খুঁজে পেতে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়। যারফলে এখন সবাই যেকোন কিছু অনলাইন থেকে সহজেই ক্রয় করে থাকে।
মজার ব্যাপার হল কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের যদি অনলাইনে একটিভ না থাকে তাহলে তাদেরকে কেউ তেমন মূল্য ই দেয় না। যারফলে প্রত্যকেই বাধ্য হয়ে নিজেদেরকে সোশিায়াল মিডিয়ায় সংযুক্ত করে নিচ্ছে।
অনলাইনে ব্যবসা করার বেশ কিছু সুবিধা এবং পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। চলুন আমরা একটু সুবিধা অসুবিধা গুলো সম্পর্কে জেনে আসি।
সুবিধাসমূহ
ইন্টারনেট এর সাহায্যেই যেকোন কিছু করা যায়। দোকানে কোন একটা সমস্যা হলে আপনি ইন্টারনেটের সাহায্যেই সবকিছু মেনেজ করে নিতেপারবেন।
সহজেই সকল কাস্টমার এর কাছে পৌছানো যায়। অফলাইনে যদি আপনি একটা দোকান দেন তাহলে সাধারণ ভাবেই ঐ জায়গার আশেপাশেরলোকজন হবে আপনার কাস্টমার। কিন্তু আপনার ব্যবসাটা অনলাইন ভিত্তিক হওয়ায় সারা দেশের সকল কাস্টমার আপনার কাস্টমারে পরিণতহতে পারে। সহজে আপনার পণ্য গুলো সম্পর্কে জানতে পারে।
আলাদা কোন খরচ নেই। অফলাইনে দোকান হলে দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীর বেতন সহ আরো অন্যান্য অনেক খরচ রয়েছে। যা কিন্তুঅনলাইন ভিত্তিক ব্যবসায় তেমন হয় না। অনলাইন ভিত্তিক গুলোতে শুধুমাত্র পণ্য গুলো রাখার জায়গা এবং এসব মেনেজ করার জন্য কিছুকর্মচারীর প্রয়োজন হয়। তারপরও অনেক অতিরিক্ত খরচ সাশ্রয় হয়।
এছাড়া আরো অন্যান্য অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
আরো জানুনঃ সোশিয়াল মিডিয়া যেভাবে আমাদের জীবনকে রোবটের মত করে ফেলতেছে
অসুবিধা সমূহ
প্রতারণা করা
যেহেতু সব কিছু ইন্টারনেট এর সাহায্যে হয়ে থাকে তাই এখানে প্রতারণার সুযোগটাও সবচেয়ে বেশি। যা অফলাইন ব্যবসায় অনেকঅনেক কম। তবে বর্তমানে সবাই অনেক বেশি সতর্ক থাকায় তা প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে।
সঠিক পণ্য না পাওয়া
আরেকটা বড় অসুবিধা হল সঠিক পণ্য না পাওয়া। যেহেতু অনলাইনে কিছু ছবি বা ভিডিও দেখে পণ্য গুলো অর্ডার করাহয় তাই অসাধু ব্যবসায়ীরা এখানে সুযোগ নিয়ে থাকে। তারা কাস্টমারদেরকে দেখায় আরেকটা দেয় আরেকটা। এর ফলে কাস্টমার তাদেরআশা–স্বরুপ পণ্যটি পান না।
বিশ্বাস অর্জন
আরেকটি অন্যতম সমস্যা বিশ্বাস অর্জন করতে না পারা। এটা দুটো পক্ষেই হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাস্টমার বিক্রেতাকেবিশ্বাস করতে পারে না।
এগুলো হল কিছু অসুবিধা। আরো অন্যান্য অসুবিধাও থাকতে পারে তবে তা এত বেশি প্রকাশ পায় না।
অ্যাফিলিয়েট করে আয়
বর্তমানে প্রতিটা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানই অ্যাফিলিয়েট সিস্টেম সেবা দিয়ে থাকে তাদের পণ্য বিক্রি বৃদ্ধির জন্য।
অ্যাফিলিয়েট সিস্টেমটা কি যদি একটু বলি তাহলে হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট সেবা দেয় এমন কোন কোম্পানি পণ্য যখন আপনি কোন একজন কাস্টমারএর কাছে বিক্রি করবেন, তখন ঐ কোম্পানিটি আপনার মাধ্যমে পণ্যটি বিক্রি হওয়ায় আপনাকে কিছু কমিশন প্রধান করবে। আর এটাইঅ্যাফিলিয়েট করে আয়ের সিস্টেম।
এখন আপনি সোশিয়াল মিডিয়া কে ব্যবহার করে অনেকভালো ভাবে অ্যাফিলিয়েটিং করতে পারবেন। কিভাবে? মনে করুন, আপনার বন্ধুএকটা মোবাইল কিনতে চাই সে বিষয়টা আপনাকে জানালো। এখন আপনি মোবাইল ফোন বিক্রি করে এমন কোন কোম্পানি বা ব্যবসায়েরঅ্যাফিলিয়েট সিস্টেম এর যুক্ত হয়েছেন। এখন আপনি কিন্তু আপনার বন্ধুকে বলতে পারেন যে ঐ দোকানে ১০% ডিসকাউন্ট এর অফার দিছেসেখান থেকে তুর মোবাইলটা কিনতে পারো অথবা অমুক দোকানের মোবাইল গুলো অনেক ভালো, তাদের সার্ভিস সবার থেকে সেরা এভাবেতাকে বুঝিয়ে আপনার রেফারেন্স এ মোবাইলটি কিনে নিলো সে। বিনিময়ে আপনি ভালো একটা কমিশন আয় করে ফেললেন।
শুধুমাত্র মোবাইল ফোন নয় আপনি যেকোন পণ্য বা সার্ভিস নিয়ে অ্যাফিলিয়েটিং করতে পারবেন। আপনার প্রয়োজন শুধু একটা ভালোনেটওয়ার্ক। আপনি যদি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কোম্পানির অফার সমূহ শেয়ার করতে থাকেন তাহলে আপনি একসময় অ্যাফিলিয়েটিং করেই মোটাঅংকের অর্থ আয় করতে পারবেন।
এভাবে আপনি ফেসবুককে ব্যবহার করে অ্যাফিলিয়েট সিস্টেম এর মাধ্যমে আয় করতে পারবেন।
আরো জানুনঃ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি? কিভাবে শুরু করবেন? বিস্তারিত
গ্রুপ থেকে আয়
ফেসবুকে প্রতিটি বিষয়ের জন্য হাজার হাজার গ্রুপ আছে। সেই সব গ্রুপে আবার লক্ষাধিক এর উপরে মেম্বার আছে। আপনি চাইলে সে সবগ্রুপকে ব্যবহার করে বিভিন্ন উপায়ে আয় করতে পারবেন।
যেমনঃ তাদের কাছে পণ্য বা সার্ভিস বিক্রি করতে পারবেন। তাদেরকে দিয়ে অ্যাফিলিয়েটিং করতে পারবেন। তাছাড়া আপনি বিভিন্ন ব্র্যান্ড এরসাথে কোলাবরেশন করতে পারবেন। পেইড কোর্স বিক্রি করতে পারবেন। আরো অনেক ধরনের উপায়ও রয়েছে, ফেসবুক গ্রুপকে ব্যবহার করেআয় করার।
এগুলোই ছিল কিছু মাধ্যম ফেসবুক থেকে আয় করার। এছাড়াও আরো অনেক ধরনের মাধ্যম বা সিস্টেম আছ। সুতরাং সোশিয়াল মিডিয়া কেশুধুমাত্র বিনোদনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করে সেগুলোকে ভালো কোন উপায়ে চিন্তা করুন তাহলে আপনি ভালো কিছু করতে পারবেন।