
আমি যদি এখন আপনাদেরকে জিজ্ঞেস করি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি? তাহলে হয়তো সবাই হাঁ করে তাকিয়ে থাকবেন। আর ভাববেন এটা কি?
আর যদি আমি আপনাদেরকে জিজ্ঞেস করি আপনি কি মানুষ ছাড়া গাড়ি চলতে দেখেছেন? অথবা মানুষ ছাড়া বড় বড় যন্ত্রপাতি তৈরি করে দেখেছেন? তখন কিন্তু সবাই বলবে যে হ্যাঁ, আমরা দেখেছি।
কখনো কি চিন্তা করেছেন যে, এই কাজগুলো হচ্ছে কিভাবে? যেখানে আমরা আমাদের মস্তিষ্কের ব্রেন কে কাজে লাগিয়ে কাজগুলো করে থাকি সেখানে কোন মানুষের উপস্থিতি ছাড়াই সব কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে।
মূলত এই কাজগুলোই সম্পূর্ণ করা হচ্ছে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কে ব্যবহারের মাধ্যমে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট (AI) কি? কিভাবে কাজ করে? এর ভবিষ্যৎ কেমন হবে? বিস্তারিত। তাই মনোযোগ শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো মেশিন দ্বারা প্রদর্শিত বুদ্ধি।
এককথায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফেশিয়াল ইন্টিলিজেন্স (AI) হলো এমন একটি পদ্ধতি যেখানে মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা শক্তিকে কম্পিউটার দ্বারা অনুকৃত করার চেষ্টা করা হয়। যেটার অসঙ্ক প্রমাণ আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি এবং ভবিাষ্যতে আরো অসাধারণ কিছু দেখতে পাবো।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাকে বলে
মানব জাতির বুদ্ধি ও চিন্তা শক্তিকে বিভিন্ন উপায়ে প্রযুক্তি নির্ভর করে যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলে। এ পদ্ধতিতে কম্পিউটারকে এমন ভাবে তৈরি করা হয় যাতে কম্পিউটার মানুষের মত ভাবতে পারে, শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে এবং নিজে থেকেই বিভিন্ন সমস্যার সমাধান তৈরী করতে পারে বা সমাধান করতে পারে।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণার ক্ষেত্রটি “বুদ্ধিমান এজেন্ট” এর অধ্যয়ন হিসাবে নিজেকে সংজ্ঞায়িত করে যে কোনও যন্ত্র যা তার পরিবেশকে অনুধাবন করে তার কিছু লক্ষ্য অর্জনের সাফল্যকে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে নিতে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা – শব্দটি প্রয়োগ করা হয় তখনই, যখন একটি মেশিন জ্ঞান জাতীয় ফাংশনগুলিকে কার্যকর করে যা মানুষের মনের সাথে মিল থাকে।
আন্দ্রেয়ার কাপলান এবং মাইকেল হেনলিন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞায় বলেন যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি সিস্টেমের বহির্ভূত তথ্য সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারার ক্ষমতা। যা বিভিন্ন তথ্য থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং ঐ শিক্ষা ব্যবহার করে নিজে নিজে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পরে।
মেশিনগুলি (এআই এর প্রযুক্তি গুলি) যখন ক্রমবর্ধমানভাবে সক্ষম হয়ে উঠে তখন মানসিক সুবিধার জন্য বুদ্ধিমত্তাকে সংজ্ঞা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অপটিক্যাল অক্ষর স্বীকৃতিটি “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার” উদাহরণ হিসাবে এখন আর অনুভূত হয় না, তখন এটি একটি রুটিন প্রযুক্তি হয়ে ওঠে।
বর্তমানে যে সক্ষমতা গুলোকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে সেগুলো মানুষের বক্তব্যকে বা মনকে সফলভাবে বুঝতে পারে ও কৌশলগত game সিস্টেম (যেমন দাবা) উচ্চতর স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারে। এরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ি চালাতে পারে এবং সামরিক সিমুলেশন এবং জটিল তথ্য উপাত্ত ব্যাখ্যা করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ (NFT)এনএফটি কি? কিভাবে কাজ করে? ভবিষ্যৎ কেমন। বিস্তারিত
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ইতিহাস
সর্বপ্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শব্দটি ১৯৫৬ সালে জন ম্যাকার্থারির দ্বারা প্রথম তৈরি করা হয়েছিল।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার লক্ষ্য
AI প্রযুক্তির সামগ্রিক গবেষণার লক্ষ্য হচ্ছে প্রযুক্তি তৈরি করা যার মাধ্যমে কম্পিউটার এবং মেশিনগুলি মানুষেল বুদ্ধিমত্তার পদ্ধতিতে কাজ করতে সক্ষম হবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মেশিন কি কি করতে পারে

১. মানুষের মতো শিখতে পারে
২. যুক্তি প্রদান করতে পারে
৩. সমস্যা-সমাধান করতে পারে
৪. ভাষা বোঝার ক্ষমতা রাখে
৫. উপলদ্ধি করতে পারে
আরো পড়ুনঃ অনলাইন থেকে ইনকাম করার সেরা ২৫ টি পদ্ধতি
যেসব কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হয়
১. ডিজাইন / বিনোদনের ক্ষেত্রে
২. সাইবার নিরাপত্তা
৩. ভিডিও গেমস
৪. স্মার্ট গাড়িতে
৫. ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে
৬. আপনার মেল স্প্যাম ফিল্টার করতে
৭. উবার এ আপনার ভ্রমণের দাম নির্ধারণ করতে
৮. ডেটা সেন্টার ম্যানেজমেন্টে
৯. জিনোমিক্স / সিকোয়েন্সিং / ড্রাগ আবিষ্কার করতে ইত্যাদি।
AI প্রযুক্তিতে কি কি ভাষা ব্যবহার করা হয়
সাধারণত AI প্রযুক্তিতে মেশিন লার্নিং প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়. তবে যে প্রোগ্রামিং ভাষা গুলো সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।
১. Pyton
২. Java
৩. Julia
৪. Haskell
৫. Lisp
৬. Scala
৭. R
৮. JavaScript
৯. C++
১০. Prolog
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপকারিতা কি?
AI ব্যবহার করে কোনো একটি কাজে ত্রুটি বা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে স্মার্ট কার্ড-ভিত্তিক সিস্টেমে জালিয়াতি সনাক্তকরণ সম্ভব হয়। এআই দ্বারা তৈরি রোবোটিকস পোষা প্রাণী “হতাশায়” আক্রান্ত রোগীদের সহায়তা করতে এবং তাদের সক্রিয় রাখতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অন্যতম একটি প্রধান সুবিধা হলোঃ এসব যন্ত্র গুলো দিয়ে মানুষের বিপরীতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ সম্পূর্ন করানো যায়। একটি মানুষষ একটানা ৪-৫ ঘন্টা কাজ করলেই হাপিয়ে যায় যার বলে তার বিশ্রামের প্রয়োজন পড়ে কিন্তু একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তৈরি রোবট বা মেশিন একটানা যেকোনো কাজ করতে পারে তার কোনো বিশ্রামের প্রয়োজন পড়ে না।
দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করা হয়।
তারা মানুষের মস্তিষ্কের চেয়ে বেশি তথ্য সঞ্চয় করে রাখতে পারে।
তারা আবেগ ছাড়াই যৌক্তিকভাবে চিন্তা করতে পারে এবং যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিলান্সিং কিভাবে শিখবো এবং কিভাবে শুরু করবো? বিস্তারিত
কৃত্তিম বুুদ্ধিমত্তার অপকারিতা কি?
আমরা সকলেই জানি যে যেকোন জিনিসের যেমন উপকারিতা আছে তেমনি অপকারিতাও রয়েছে।
এই AI প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অসুবধিা হল মেশিন দিয়ে বর্তমানে অনেক কাজ করানোর ফলে দিন দিন বেকারত্বের হার বাড়ছে। আগে যে কাজ গুলো মানুষ করতো এখন সেই কাজ গুলো মেশিন করছে। ফলে সেই শ্রমিক গুলো কর্মহীন হয়ে পড়ছে।
মানুষ আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স (AI) এর উপর খুব নির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারে এবং তাদের মানসিক ক্ষমতা হারাতে পারে।
মেশিন মানেই ধ্বংসাত্মক। তাদের দিয়ে যেমন তাড়াতাড়ি কাজ করানো সম্ভব ঠিক তেমনি ভুল প্রোগ্রামিং দিয়ে মেশিন তেরি বা অন্যান্য ত্রুটির কারনে তারা মানুষের জন্য বিপদের কারন হয়ে উঠতে পারে।
AI সম্পন্ন মেশিন তৈরি ও বাস্তবায়নে বিপুল অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন। একজন মানুষ যা ভাবে বা যে ভাবে চিন্তা করে একটি রোবট বা মেশিন সেভাবে ভাবতে বা চিন্তা করতে পারে না। এআই এর মেশিন গুলো যে নিদিষ্ট প্রোগ্রাম দিয়ে তৈরি করা হয় সেটি শুধু তার মাধ্যমেই কাজ করতে পারে এর বাইরে কোনো কাজ করতে পারে না বা কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না। কম্পিউটার দিয়ে এগুলো পরিচালিত হয় বলে এই মেশিন গুলো যেসব ফলাফল দেয় বা বা যেসব কাজ করে, হ্যাক করে সেই ফলাফল গুলো পরিবর্তন করা যায় বা তাকে দিয়ে অন্য কাজ করানো যায়।
এছাড়া এই AI এর ভুল ব্যবহারে ফলে মানুষের জন্য ব্যাপক ক্ষতি সাধন হতে পারে।
যদিও আমরা এসব মেশিন থেকে সুবিধা পাচ্ছি তবুও এসব মেশিন ব্যবহার বা তৈরির সময় সতর্ক থাকতে হবে যাতে ভুল কোডিং এর জন্য উপকারের পরিবর্তে তারা আমাদের অপকার করতে না পারে।
সবশেষ কথাঃ
বর্তমানে প্রায় সকল কাজেই এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। হাসির ঘটনা হলেও একটা খবর অনেক ভাইরাল হয়েছিল যেটা ছিলো রোবট বউ পাওয়া যায় যে আপনার সকল কাজ করে দিবে। এসব কিছুই সম্ভব কৃত্রিম বু্দ্ধিমত্তা বা এআই এর জন্য। উপকারের পাশাপাশি কিছুটা অপকার করলেও এই মেশিন গুলো আমাদের অনেক কাজকে সহজ করে দিয়েছে। আমরা চেস্টা করব প্রতিটা জিনিসের যেন সঠিক ব্যবহার করতে পারি।
আশা করি লেখাটি পড়ে আপনি এআই কি? এআই এর ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে অল্প কিছু হলেও জানতে পেরেছেন। লেখাটি কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাবেন এবং আপনার বন্ধুূদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
সময় দিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।