ওয়েব ৩.০ কি? ওয়েব ৩.০ যেভাবে বিশ্বকে পরিবর্তন করবে। বিস্তারিত

বর্তমানে আমরা এমন একটা সময়ে  বসবাস করতেছি যেখানে ইন্টারনেট ছাড়া একটা মিনিটও কল্পনা করা সম্ভব নয়।  সকল কিছু এখন ইন্টারনেট ভিত্তিক হয়ে গেছে। যুগের সাথে সাথে পরিবর্তন হচ্ছে ইন্টারনেটের ভার্সন। অনেকে হয়তো জানেন অনেকে জানেন না যে গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব এ ধরনের বড় বড় কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত আমাদের তথ্য গুলো তাদের সার্ভার এ জমা রাখতেছে। তারা পরবর্তীতে আমাদের ডাটাগুলো ব্যবহার করে বড় অংকের টাকা তারা আয় করতেছে।

কিন্তু সামনে এমন একটা সময় আছে যে যখন আমরা আমাদের সকল তথ্যগুলো নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো এবং সেই তথ্যগুলোই বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করতে পারবো।

এটা শুনে এখন হয়তো আজব লাগতেছে কিন্তু যখন ইন্টারনেট দুনিয়ায় ওয়েব ৩.০ চলে আসবে তখন এই বিষয়টি কার্যকর হবে। সেই সময় ফেসবুক, ইউটিউব, গুগলের মতো কোম্পানিগুলো আমাদের ডাটা কালেক্ট করতে পারবে না।

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানব ওয়েব ৩.০ কি? এটা কখন আসবে এবং কি কি সুবিধা ও অসুবিধা আমরা পাব। বিস্তারিত

ইন্টারনেট এর ইতিহাস

প্রথমে ওয়েব ৩.০ জানার আগে ইন্টারনেটের ইতিহাস জেনে নিই। অতীত না জানলে বর্তমানকে অনুভব বা অনুধাবন করা কিছুটা মুশকিল হয়ে পড়বে। তাই ওয়েব ৩.০ জানার আগে যে বিষয়টি জানতে হবে সেটি হলো ওয়েব বা ইন্টারনেট ভার্সন কি? 

আমাদের জীবনে প্রতিটা জিনিসের ই উন্নতি হয় এটা জানি এবং দেখেছিও। পড়াশোনার ক্ষেত্রে আমরা এক ক্লাস শেষে পরবর্তী ক্লাস বা আরো উপরের ক্লাস এ যাই। চাকরির ক্ষেত্রেও আমরা ভালো পারফমেন্স দেখাতে পারলে পরবর্তীতে প্রমোশন পেয়ে আরো উপরের লেভেল এ যাই। টিক তেমনি ইন্টারনেট এর জগতে এমন উন্নতি হয়ে বর্তমানে ভার্সন ৩ এ এসে পৌচেছে।

আরো পড়ুনঃ ইন্টারনেট কি? কিভাবে কাজ করে? কেন গুরুত্বপূর্ণ? বিস্তারিত

ওয়েব ১.০

ওয়েব বা ইন্টারনেট এর সর্বপ্রথম ভার্সন হলো ওয়েব ১.০। 

যেটা ছিল শুধুমাত্র টেক্স ভিত্তিক, অর্থাৎ তখন লিখা ছাড়া কোন ধরনের ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করা যেত না।  এছাড়া তখন ইন্টারনেট শুধু এক মুখী কাজ করতো। মানে কোনো একটি ওয়েবসাইট এর মালিক বা এডমিন তার ইউজারদের যা দেখাতে চাইতো ইউজাররা শুধু সেগুলোই দেখতে পারতো কিন্তু সেই কনটেন্ট এর বিষয়ে ব্যবহারকারীরা কোনো মন্তব্য করতে পারতো না। এই ভার্সনে ইউজারদের কাজ হলো এডমিনদের দেখানো বিষয় গুলো দেখা। সেখানে তারা তাদের নিজেদের ভাব প্রকাশ করতে পারতো না। ১৯৭০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এই ভার্সন টি ব্যবহার করা হতো।

ওয়েব ২.০

২০০৫ সাল থেকে ওয়েব ২.০ এই ভার্সনটি চালু হয়। যেটা এখন পর্যন্ত আমরা ব্যবহার করতেছি। এই ভার্সনটি ইন্টারনেট এবং কম্পিউটার জগৎে আমূল পরিবর্তন আনে। এই ওয়েব ২.০ চালুর পর সারা বিশ্বে ব্যাপক হারে ইন্টারনেট এর ব্যবহার বাড়তে থাকে। দ্রূত তথ্য আদান প্রদান এর জন্য ওয়েব ২.০ ব্যবহারকারীদের মাঝে একটি বিশ্বাসের জায়গা অর্জন করে নেয়। শুরু হয় এক তাল মাতাল প্রতিযোগিতা।  

 এই ভার্সনে ইন্টারনেট ব্রাউজার দিয়ে ইউজাররা কোনো সাইটের তথ্য দেখা বা শোনার পাশাপাশি তাদের মন্তব্য জানাতে পারতো এবং নিজের জানার ইচ্ছা ও প্রশ্ন জানাতে পারে। যেখানে ইউজাররা নিজের নাম ও অন্যান্য তথ্য ব্যবহার করে নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারবেন। তারপর আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করে ওয়েবসাইট বিষয়ক সকল তথ্য জানতে পারে।

 বর্তমানে ওয়েব ২.০ এর সবচেয়ে বড় মধ্যম হলো ফেসবুক, টুইটার, ইনস্ট্রাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, ইকমার্স ইত্যাদি এ ধরনের ওয়েবসাইট গুলো। 

 সোশ্যাল এই মিডিয়া গুলো ব্যবহার করে পরিচিত এবং অপরিচয় লোকজনদের সাথে তৈরি হচ্ছে আন্ত সম্পর্ক। আদান প্রদান হচ্ছে তথ্য, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি। ওয়েব ২.০ ব্যবহার করে একে অপরের সাথে খুব সহজেই যোগাযোগ করতে পারছে। এই আশ্চর্য আবিষ্কারকেই বলা হয় ইন্টারনেট বা ওয়েব ভার্সন ২.০। এটিতে এখনো পর্যন্ত আমরা বিচরণ করছি।

 ওয়েব ৩.০ 

 ওয়েব ৩.০ হলো ইন্টারনেটের একটি নতুন রুপ বা ভার্সন। এর কাজ হলো ইন্টারনেটকে উন্মুক্ত বা বিকেন্দ্রীকরণ করা।  ইন্টারনেট জগৎকে বদলে দেওয়ার এক অভূতপূর্ব আবিষ্কার হলো এই ওয়েব ৩.০। এটি একটি ডিস এনালাইজিড পদ্ধতি। এই পদ্ধতির একটি মূল বৈশিষ্ট্য হলো লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি ইউজার তাদের নিজস্ব কনটেন্ট গুলোর মালিক এবং তাদের মালিকানা তাদের নিজেদের হাতেই সংরক্ষিত থাকবে। 

ওয়েব ২.০ তে অনেক কনটেন্ট রয়েছে যাদের মালিকানা সত্ত্ব  থাকা সত্ত্বেও যেকোনো ব্যক্তি সেই কনটেন্ট গুলো ডাউনলোড করে নিজস্ব কনটেন্ট বলে চালিয়ে বা বিক্রয়ও করে দেয়। 

ওয়েব ৩.০ হলো ইন্টারনেট প্রযুক্তির পরবর্তী প্রজন্ম যা মেশিং লার্নিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের উপর বেশি নির্ভর করে। এটির লক্ষ্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা মাধ্যম তৈরি করা যা মেশিন লার্নিং বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডেটা বেঝার ক্ষমতা রাখবে। এর আরো একটি লক্ষ্য হলো বিভিন্ন তথ্য ইউজারদের সামনে আরো তাড়াতাড়ি পৌছে দেয়া। 

 আপনারা জানলে অবাক হবেন যে পৃথিবীতে ব্যবহারিত সম্পন্ন ইন্টারনেটের মধ্যে ৪৩ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারিত হয় নেটফ্লিক্স, ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল এবং মাইক্রোসফট এ।

আরো পড়ুনঃ (NFT)এনএফটি কি? কিভাবে কাজ করে? ভবিষ্যৎ কেমন। বিস্তারিত

কিভাবে বড় বড় কোম্পানি গুলো আমাদের তথ্য দিয়ে ব্যবসা করতেছে

আপনার হয়ত বিশ্বাস নাও হতে পারে যে, আমাদের প্রতিটা সেকেন্ড এর ডাটা গুলো ফেসবুক, গুগল এবং মাইক্রোসফট এর মত বড় বড় কোম্পানি গুলো তাদের ডাটা সার্ভার এ যুক্ত করতেছে এবং তারা এই ডাটা গুলোকে ব্যবহার করেই আমাদেরকে ব্যবসা করতেছে৷

আপনারা বলবেন এটা কিভাবে। বিশ্বাস হচ্ছে না৷ তাহলে আপনি একটা কাজ করেন, গুগলে একটা প্রোডাক্ট নিয়ে সার্চ করেন আর কিছুক্ষণ বিভিন্ন প্রোডাক্ট নিয়ে ঘাটাঘাটি করেন৷ তারপর দেখবেন যে আপনি ফেসবুক, ইউটিউব যেখানেই যান না কেন ঐ পণ্য গুলোর এ্যাড আপনার কাছে চলে আসতেছে৷ আর একটা এ্যাড আপনি দেখে যতটা টাকা খরচ হবে তার থেকে ১০ গুণ বেশি টাকা খরচ হবে যখন আপনি ঐ এ্যাড টা ক্লিক করবেন৷ এখন হয়ত বুঝতে পেরেছেন।

আর অন্যদিকে ওয়েব ৩.০ এমন একটা সিস্টেম যেখানে আপনি আপনার ইন্টারনেটের সকল তথ্যকে নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। আরো মজার ব্যাপার হল তখন আপনি আপনার তথ্য বিক্রি করে আয় করতে পারবেন৷ তবে এখনো ওয়েব ৩.০ এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয় নাই। 

তবে এটার বিভিন্ন নাম দিয়েছেন যেমনঃ 

  • SEMANTIC WEB
  • TRANSCENDENT WEB
  • WEB OF THING

 ওয়েব ৩.০ এর উপকারিতা 

বর্তমান ইন্টারনেট যুগের লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকার মূলধন ক্যাবল মাত্র কয়েকটি সংস্থার হাতেই সীমাবদ্ধ। বিশেষ করে গুগল, ফেসবুক,টুইটার,ইনস্ট্রাগ্রাম ইত্যাদি। যে সমস্ত কনটেন্ট ক্রিয়েটররা ব্লগ বা ওয়েব সাইট তৈরি করে সেখানে কনটেন্ট আপলোড করছেন তা সবই গুগলের নিয়ন্ত্রণাধীন।  আপনার নিজস্ব কনটেন্টের মালিক আপনি ঠিকই কিন্তু সেই কনটেন্টকে কাজে লাগিয়ে টাকা আয় করছে গুগল আপনি তার সামান্যতম অংশের ভাগীদার হচ্ছেন। কখনো বা একেবারেই পাচ্ছেন না।

 আমরা যতই সার্চ করি বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য তার সবই আপনার এবং আমার মতো বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট ক্রিয়েটররা নিজস্ব ব্লগ বা ওয়েব সাইট বানাতে ডোমেইন এবং হোস্টিং কিনে গুগলের সরণাপর্ণ হয়।  ঠিক এখানেই SEMANTIC WEB ওয়েব ২.০ এর বিপরীত কথা বলে অর্থাৎ  যারাই কনটেন্ট ক্রিয়েটর তারাই প্রকৃত পক্ষে সেই কনটেন্ট এর মালিক এবং সেই মালিকানা স্বত্ব সংরক্ষিত থেকে তার মূল্যায়ন পাবে এবং রিয়্যালিটি ভোগ করবে। 

এই পদ্ধতি যে প্রযুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে সেটিই  হলো ব্লকচেইন পদ্ধতি। এই প্রযুক্তিতে একে অপরের সঙ্গে ব্লকচেইন এর মাধ্যমে সংযুক্ত থাকবে। এছাড়া এখানে প্রতিটি আপলোড – ডাউনলোড অথেনটিক হতে হবে, যদি না হয় তাহলে কোনো ভাবেই ট্রানজেকশন অথবা আপলোড – ডাউনলোড করা যাবে না।

 আর এই পুরো বিষয়টিকেই বলা হয় ওয়েব ৩.০ বা ব্লকচেইন। যা প্রযুক্তির এক অনন্য বিকাশ। 

ওয়েব ৩.০ অপকারিতা

আমরা এখনই দেখতে পাচ্ছি যে মানুষ কিভাবে মেশিন এর উপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে আমাদের শরীর প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষের গড় আয়ু কমতেছে। ধারনা করা হচ্ছে SEMANTIC WEB আসলে মানুষ সম্পূর্ণ মেশিন এবং রোবটিক্স কেন্দ্রিক হয়ে যাবে।

তখন আপনার বাড়ির এসি নিজে থেকেই অন হবে। এসি নিজে থেকেই আপনার পছন্দ এবং আবহাওয়া অনুযায়ী সেট হয়ে যাবে। বাড়ি থেকে বের হলেই আপনার গাড়ি আপনার সামনেেএসে হাজির হবে। কোন ড্রাইভার ছাড়াই আপনাকে অফিসে পৌছে দিবে। এভাবে মানুষ রোবটিক্স এর মত হয়ে যাবে।

সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল, তখন মানুষের বেক্রত্বের সংখ্যা প্রতিনয়িত বাড়বে এবং মানুষ সম্পূর্ণ কর্মবমিুখ হয়ে পড়বে। মেশিন প্রক্রিয়ায় সকল কিছু চলতে থাকবে।

 সবশেষ কথাঃ

 প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত যেভাবে উন্নতি হচ্ছে তেমনি মানুষের উপকারের ছেয়ে অপকার বেশি হচ্ছে। মানুষ বাস্তব সুখকে ভুলে যাচ্ছে। হতাশাকে কাছে টেনে নিচ্ছে। এভাবেই প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত আমাদেরকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাই আমাদের চেস্টা করতে হবে প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে নিজেদের উন্নতি ঘটানো। 

 এই ছিল ওয়েব ৩.০ নিয়ে আমার ছোট্ট জ্ঞান আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম। কিছু শিখতে পারলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

সময় নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button