
আমরা সকলে জানি এবং বিশ্বাস ও করি যে বর্তমানযুগ ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগ। আবার যদি টাকা বা ডলারের দিক দিয়ে বলি তাহলে বর্তমানযুগ হচ্ছে ক্রিপ্টো-কারেন্সির যুগ। যদিও বাংলদেশে ক্রিপ্টো-কারেন্সি অবৈধ, তবুও কিন্তু উন্নত দেশগুলোর সাথে লেনদেন করতে অনেকেই ক্রিপ্টো-কারেন্সি ব্যবহার করতেছে। আর এই ক্রিপ্টো-কারেন্সির দুনিয়ায় বিট-কয়েন এর পর একটা জিনিস সবচেয়ে জনপ্রিয়, আর তা হল এনএফটি (NFT).
আজকের এই আর্টিকেল এ আমরা জানবো এনএফটি কি? কিভাবে কাজ করে? এনএফটির ভবিষ্যৎ কি? এসব তথ্য নিয়ে। কিছুক্ষণ সময় দিয়ে মনযোগ সহকারে পড়ার চেস্টা করুন।
এনএফটি কি?
প্রথমে বলি (NFT) হচ্ছে এর Non Fungible Token সংক্ষিপ্ত রুপ।
এনএফটি নিয়ে কথা বলার আগে চলুন আগে বিষয় জেনে নিই।
মনে করুন, আমি একটা কলমের দোকানে গিয়ে ৫ টাকার দুটি কলম নিয়ে দোকানদারকে ২০ টাকার একটি নোট দিলাম। এখন দোকানদার আমাকে বাকি ১০ টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ১০ টাকার একটি নোটও দিতে পারে আবার ৫ টাকার দুটি নোটও দিতে পারে।
এখানে সে ১০ টাকার একটি নোট নাকি ৫ টাকার দুটি নোট দিলো সেটার আমার দেখার বিষয় না কারণ ১০ টাকার একটি নোটের মূল্য যা ৫ টাকার দুটি নোটের মূল্য একই। আমি ১০ টাকা ফেরত পেলেই হয়।
আমরা কেউ এক্ষেত্রে দ্বিমত করবো না কারণ ১০ টাকার একটি নোটের পরিবর্তে সেখানে ৫ টাকার ২ নোট দিয়ে সেটা রিপ্লেস করা যায়।
এই বিষয়টিকে ফান্জিবিলিটি বলা হয় এবং যে যে পণ্য বা বস্তু গুলো এভাবে একটার জায়গা অন্য একটি দিয়ে রিপ্লেস করা যায় তাদের ফান্জিবল আইটেম বলা হয়।
আবার ধরুন শাহজাহান মমতাজের জন্য যে তাজমহল তৈরি করেছে সেই মহলটি ভারত সরকার নিয়ে যদি বলে আমরা আগের মতোই একটি মহল তৈরি করে দিব তাহলে সেটা কি জনগণ মেনে নিবে?
না, এটা কেউ মেনে নিবে না।
কারণ এখানে আগের তাজমহল এর স্থানটি অন্য কোনো নতুন তাজমহল দিয়ে রিপ্লেস করা সম্ভব না।
এটা হলো নন-ফান্জিবল আইটেম। নন ফান্জিবল কথাটি জানার দরকার হলো এনএফটি (NFT) এর পূর্ণরুপ হলো Non Fungible Token.
যারা ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে কাজ করেন তারা সকলেই টোকেন কি সেটা জানেন।
সহজ ভাষায় বলতে “অনলাইনে আদান প্রদান এর তথ্য টোকেন এর মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়”।
এবার আমরা এনএফটি নিয়ে কথা বলি।
এনএফটি হলো বর্তমান সময়ের একটি ভয়াবহ বিষয়। এনএফটি সারা পৃথিবীতে ধীরে ধীরে তার স্থান করে নিচ্ছে। বিশেষ করে ডিজিটাল অ্যাসেট এর ক্ষেত্রে এনএফটি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
এনএফটি একটি আমাদের সকলের কাছে নতুন একটি বিষয় হলেও সম্প্রতি সময়ে এটা বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
আরো পড়ুনঃ প্রোগ্রামিং কি? কত প্রকার ও কি কি? (Programming bangla guidline)
এনএফটি কিভাবে কাজ করে?
আপনার মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে এনএফটির মাধ্যমে মানুষ কিভাবে বেচা কেনা করে? কিভাবে পণ্য গুলো আদানা প্রদান করা হয়? সহ আরো অনেক প্রশ্ন।
আসুন এ বিষয়ে একটু কথা বলে নিই।
দরুণ নিউটনের ব্যবহূত একটি চশমা আপনি কিনে নিজের কাছে রাখছেন। সেটা আপনার ঘরে সাজিয়ে রেখে আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং প্রতিবেশীদের দেখাতে পারবেন যে এই দেখো আমি নিউটনের ব্যবহূত একটি চশমা কিনেছি।
আপনি দাবী করতে পারেন যে আপনি সেই চশমাটির মালিক এবং সেই চশমাটির দাম দিন দিন বাড়বে কারণ অনেকেই এটি তাদের সংগ্রহ এর জন্য কিনতে চাইবে। আপনাকে অনেকিই অফারও করবে যে সে এত টাকা দিতে রাজি এটার জন্য। এভাবে যখন একটা জিনিসের প্রতি অনেক বেশি চাহিদা তৈরী হবে এটার মূল্য দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। এর প্রধান কারণ তার মাত্র একটি পিস আছে যেটি আপনার কাছে। বিষয়টি খুবই সহজ।
এনএফটি আমাদের একটি সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে সেটি হলো কোন জিনিসের ডিজিটালি মালিক কে সেটাও এখন আমরা সহজেই জানতে পারি।
ধরুন, অনলাইনে আপনি এমন একটি জিনিসের ছবি পেলেন যেটা মাত্র একটি কপি আছে। আপনি চাইলেই সেই ছবিটি সেভ করে আপনার ফোনে বা কম্পিউটারে রাখতে পারবেন কিন্তু আপনি কিন্তু ঐ জিনিসের মালিক না। সেই জিনিসের আসল মালিক কে সেটা আমরা এখন এনএফটির মাধ্যমে জানতে পারি।
একটি সমস্যা হলোঃ ধরুন আপনি ১০,০০০ টাকা ডিজিটাল একটি পণ্য কিনলেন কিন্তু সেটা আপনি আপনার বন্ধুদের কিভাবে দেখাবেন। আপনি কি আপনার ফোন বা কম্পিউটার দিয়ে আপনার বন্ধুদের বলবেন যে দেখো আমি এত টাকা দিয়ে এটা কিনেছি!!!
দেখুনঃ আজ আমরা যে অবস্থায় আছি আজ থেকে ৫০ বছর পর কিন্তু সবকিছু চেন্জ হয়ে যাবে। তখন সব সবাই VR ব্যবহার করে চলবে। এখন কিছু ছেলে মেয়ে গেমস খেলে কিন্তু সেই সময় আমাদের বাস্তব জীবনই গেমসের মতো হয়ে যাবে। মানুষ তখন VR গগলস পরে থাকবে।
এনএফটির মাধ্যমে আমরা যেসব পণ্য গুলো কিনবো সেগুলা VR গগলস এর মাধ্যমে আপনার ঘরে সাজিয়ে রাখতে পারবেন এবং আপনার বন্ধুদের যদি ভার্চুয়ালি দাওয়াত দেন তাহলে তাদের সেগুলো দেখাতে পারবেন।
বর্তমানে আজব আজব সব জিনিস বেচা কেনা হচ্ছে। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় ফেসবুক বা টুইটার এর সর্বপ্রথম পোস্টও বিক্রি করা হয়। দেখুন এইসব পোস্ট কিনে তো আমাদের বাস্তব জীবনে কোনো লাভ নেই এটা শুধুই ভার্চুয়ালি একটা বিষয়।
আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে জিনিস কিনে আমাদের কোনো লাভ নেই বা ফ্রিতেই যে জিনিস অনলাইন থেকে পাওয়া যায় তাহলে টাকা দিয়ে সেই সব পণ্য কেন কিনবো?
মোনালিসার আর্টটি দিয়ে উদাহরণ দেওয়া যাক।
বাজারে মোনালিসার অনেক গুলো আর্ট পাবেন বা আপনি যদি অনলাইনে সার্চ করেন তাহলে আপনি হাজার হাজার ছবি পেয়ে যাবেন তারপরেও দেখবেন প্যারিসে গিয়ে অনেকেই মোনালিসার আসল আর্টটি দেখতে যায়। কারণ আমাদের কাছে অনেক নকল কপি থাকলেও আসল জিনিস দেখার মজাই আলাদা বা আসল জিনিসটি নিজের কাছে থাকাতে অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে।
যারা পুরাতন জিনিসপত্র সংগ্রহ করে থাকে তাদের কাছে এই বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
আবার আসল জিনিসটা যত কপি হয়,ঐ জিনিসটি তত বেশি মূল্যবান এবং জনপ্রিয় হয়। আপনি যদি মোনালিসার অনেক গুলো ছবি তুলে ভাইরাল করেন তাহলে আপনার ভাইরাল করা ছবিটির মূল্য বাড়বে না, মূল্য বাড়বে আসল মোনালিসার।
আরো পড়ুনঃ ব্লগিং কি? কিভাবে শুরু করবেন? ব্লগিং করে কিভাবে আয় করবেন?
এনএফটি কেন প্রয়োজন?
ডিজিটাল অ্যাসেট এর মালিক কে এবং ডিজিটাল অ্যাসেট কে কার কাছে বিক্রি করছে এটা NFT এর মাধ্যমে জানা যায়। ডিজিটাল অ্যাসেট অনেক কিছু হতে পারে যেমন কোনো ছবি,ভিডিও,ক্লিপআর্ট,জিপ ফাইল,পোস্ট ইত্যাদি।
একই জিনিসের একাধিক কপি একাধিক লোকের কাছে থাকতে পারে কিন্তু সেই জিনিসের আসল মালিক কে সেটা জানার জন্য এনএফটি প্রয়োজন। কারণ কেউ যখন কোনো একটি পণ্য এনএফটির মাধ্যমে কিনে তখন সেটি টোকেন আকারে অনলাইনে জমা থাকে এবং এর মাধ্যমে এর মালিক কে সেটা সবাই জানতে পারে।
এই জন্য অনেক কালেক্টর ডিজিটর জিনিসপত্র সংগ্রহ করা শুরু করেছে।
এনএফটির ভবিষ্যৎ কি?
ভবিষ্যৎের কথা বাদই দিলাম বর্তমানেও এনএফটি বিষয়ক অনেক চাকরি পাওয়া যায়। বিশেষ করে যারা ইথেরিয়াম নিয়ে কাজ করে তাদের জন্য অনেক চাকরি অফার করা হচ্ছে।
দিন দিন এনএফটির জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং এখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে।
বর্তমান সময়ে এনএফটি বিষয়ক অনেক ওয়েবসাইট তৈরি করা হচ্ছে।
বিশেষ করে যারা গ্রাফিক্স ডিজাইনার তাদের জন্য এটি আশির্বাদ স্বরুপ। কারণ তারা নিজের ডিজাইন করা ছবি বা অ্যাসেট গুলো এনএফটির মাধ্যমে বিক্রি করে অনেক টাকা আয় করতে পারবে।
এছাড়া আপনি চাইলে নিজেই বিভিন্ন ক্রিপ্টো মার্কেট থেকে এনএফটি টোকেন কিনে রাখতে পারবেন, যা আপনি কিছুদিন সংরক্ষণ করে ঐটার যখন মূল্য বৃদ্ধি পাবে তথন আপনি এগুকে অনেক ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন। এছাড়া আপনি শুনলে অবাক হবেন যে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে দামি এনএফটি টির মুল্য হচ্ছে $91 800 000. যা বাংলাদেশি টাকায় কত হবে আপনি নিজেই একবার ভেবে দেখুন। যা ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ ২০২২ এ যে ১০ টি বিষয় শেখা উচিৎ – Todaytrick
সবশেষ কথাঃ
বর্তমান সময়ের কথা চিন্তা করলে NFT আমাদের তেমন কাজে আসবে না তবে আপনি যদি আগামী ৫০ বছর পরের পৃথিবীর কথা চিন্তা করেন তাহলে NFT একটি বিশাল আবিষ্কারের নাম। তখন সকলেই বাস্তব জীবন থেকে ভার্চুয়াল জীবনে বেশি সময় কাটাবে। তাই আমাদের উচিত ক্রিপ্টো-কারেন্সি নিয়ে, এনএফটি বিষয়ক সকল তথ্য জেনে নেওয়া।
এটা ছিল এনএফটি নিয়ে ছোট্ট একটি ধারণা দেওয়ার চেস্টা করলাম। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিন।