
উদ্যোক্তা শব্দটির সাথে আমরা প্রত্যেকেই কম-বেশি পরিচিত। সাধারণত আমরা উদ্যোক্তা বলতে কোন একজন সফল ব্যাক্তিকে বুঝি। আর যেই কাজটি একজন উদ্যোক্তা করারা জন্য সিদ্ধান্ত নেন তাই হল উদ্যোগ।
আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা জানব উদ্যোগ এবং উদ্যোক্তা কি? কিভাবে আপনি একজন সফল উদ্যোক্তা হবেন এবং একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য কি কি গুণাবলী থাকা প্রয়োজন সম্পর্কিত বিষয়গুলো সম্পর্কে। তাহলে চলুন প্রথমে জেনে নেওয়া যাক উদ্যোগ কি সেই সম্পর্কে:-
উদ্যোগ কি?
সাধারণত কোন ব্যাক্তি যখন কোন কাজ করার চিন্তা-ভাবনা বা মনমানসিকতা তৈরি করেন সেটাই হল উদ্যোগ।
মনে করুন, আপনি আপনার এলাকাই একটা মুরগির ফার্ম দিলেন। শুরুতে হয়ত আপনি তেমন ভালো করতে পারবেন না। তবে আপনি যখন এই কাজটা করতে করতে অনেক বড় হয়ে যাবেন, আপনার ফার্ম এ ৫-১০ জন লোকের কর্মসংস্থান তৈরি করলেন। তখন এটাকে একটা সফল উদ্যোগ বলা হয়।
উদ্যোক্তা কি?
উদ্যোক্তা হচ্ছে সাধারণত এমন একজন ব্যক্তি যিনি এমন কোন পণ্য বা সেবা তৈরি করে থাকেন যে সম্পর্কে মানুষ আগে ভাবে নি। এই ক্ষেত্রে পুরনো কোন ব্যবসা নতুন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে শুরু করা কেউ একজন উদ্যোক্তার কাজ হিসেবে ধরা হয়।
আশাকরি উদ্যোক্তা কাকে বলে আপনারা এই বিষয়ে বুঝতে পেরেছেন। তাহলে চলুন এবার জেনে নেয়া যাক উদ্যোক্তার ভিতরে কি কি বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত:-
উদ্যোক্তার যেসব বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত
একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে, না হলে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব নয়। তাই নিচে একজন সফল উদ্যোক্তার ভিতরে যে সকল বৈশিষ্ট্যগুলো থাকা উচিত তা উল্লেখ করা হলো:-
ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা থাকতে হবে
আমরা সবাই জানি যে ঝুঁকি হল সফলতার পুরস্কার। যে কাজে যত বেশি ঝুঁকি সে কাজের পুরস্কার তত বড়।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ব্যবসা করতে চান কিন্তু কোন ধরনের ঝুঁকি নিতে চান না। আপনাকে যদি বড় কোন ব্যবসা করে সফলতা অর্জন করতে হয় তাহলে অবশ্যই সেই ব্যবসাতে ঝুঁকি থাকবে। তাই একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার আগে ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা টা নিজের ভেতর থাকতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ডিজিটাল মার্কেটিং কি? Digital Marketing bangla guideline
সঠিক কাজ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে
সাধারণত যে কোনো ব্যবসায়ী ব্যবসায় নেমে থাকেন শুধুমাত্র মুনাফা অর্জন করার জন্য। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে সেটি হচ্ছে কাজের প্রতি ভালোবাসা। আপনি যে ব্যবসা করতে চান তার সাথে সংশ্লিষ্ট কাজ গুলোর প্রতি আপনার ভালোবাসা থাকতে হবে এবং বাজারে বৈচিত্র্যময় কিছু কাজ আপনাকে উপহার দিতে হবে তাহলে আপনি এখান থেকে ভালো কিছু করতে পারবেন।
সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে হবে
যারা ব্যবসা ক্ষেত্রে আজ সফল হয়েছেন তারা কিন্তু কোন সময়ই সময়ের অপচয় করেননি। তারা তাদের প্রতিটি মূহুর্তকে সঠিকভাবে ব্যবহার করেছেন। সময়ের যদি সঠিক ব্যবহার না করতে পারেন তাহলে কোন দিনই ব্যবসা ক্ষেত্রে সফল হতে পারবেন না। কথাই আছে, সময়ের একপুড় অসময়ের দশ পুড়।
তাই আপনাকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই সময়ের যথার্থ মূল্যায়ন করতে হবে এবং পরবর্তী পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে। তাহলেই আপনি এই ক্ষেত্রে সফল হতে পারবেন।
ধৈর্য ধরে কাজ করে যেতে হবে
আপনাকে যে কোন কাজে সফলতা অর্জন করার জন্য অবশ্যই ধৈর্য্যসহকারে কাজ করে যেতে হবে ।ধৈর্য খুবই বড় একটি জিনিস সফলতা অর্জন করার ক্ষেত্রে। আপনার ভিতরে যদি ধৈর্য না থাকে তাহলে আপনি কোন কাজ করেই জীবনে সফল হতে পারবেন না। তাই অবশ্যই একজন উদ্যোক্তার ভেতরে এই গুণাবলী থাকা উচিত।
আশা করি একজন উদ্যোক্তার ভিতরে কি কি বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত আপনারা এতক্ষণে জেনে গিয়েছেন। সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য এই বিষয়গুলো খুবই জরুরী। তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক উদ্যোক্তা কেন হবেন সেই সম্পর্কেঃ-
আরো পড়ুনঃ সফলতার পাঁচটি সহজ সূত্র। যা আপনাকে সফল হতে সাহায্য করবে।
উদ্যোক্তা কেন হবেন?
ব্যবসাক্ষেত্রে ভালো কিছু করার জন্য অবশ্যই একজন উদ্যোক্তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। আর এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলে অনেক কথাই বলা লাগবে।
একজন উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে আপনি যেমন নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন এবং এর মাধ্যমে অনেকের কাজের কর্মসংস্থান করে দিতে পারবেন। তাছাড়া আপনি নিজের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে।
উদ্যোক্তা হওয়ার আরো অনেক যথার্থ কারণ রয়েছে। যা আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আলোচনা করলে আর্টিকেলটি আরো লম্বা হয়ে যাবে। তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক উদ্যোক্তা হওয়ার উপায় সম্পর্কে:-
উদ্যোক্তা হওয়ার উপায়
উদ্যোক্তা হওয়ার সঠিক উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া যাবে না। কিন্তু যারা সফল উদ্যোক্তা রয়েছে তারা কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করার মাধ্যমে বা তাদের মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে তারা একজন সফল উদ্যোক্তা হতে পেরেছেন। এবার আমি আপনাদের সাথে সেইরকম কিছু গুণাবলী সম্পর্কে নিচে আলোচনা করবঃ-
নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা থাকতে হবে
একজন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য এই বৈশিষ্ট্যটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।কেননা উদ্যোক্তা মানে হচ্ছে নতুন কিছু নিয়ে কাজ করা বা নতুন কিছু সৃষ্টি করা। তাই আপনি যখন সবাইকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাইবেন তাহলে অবশ্যই আপনার ভেতরে নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা থাকতে হবে তা না হলে আপনি কোনোভাবেই একজন সফল উদ্যোক্তা হতে পারবেন না।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকতে হবে
সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকাটা খুবই জরুরী। অর্থাৎ আপনাকে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। নতুন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সর্বদা প্রস্তুত তাকতে হবে। তাহলে আপনি এক্ষেত্রে বাকিদের তুলনায় অনেকটা এগিয়ে থাকবেন। তাই একজন উদ্যোক্তার ভেতরে অবশ্যই এই বৈশিষ্ট্যটি থাকা উচিত।
বুদ্ধিমান হতে হবে
আপনাকে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ব্যবসায়ী জ্ঞান ছাড়া আরও অনেক ধরনের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আপনার মাঝে এমন কিছু জ্ঞান থাকতে হবে যা অন্যদেন কাছ থেকে আপনাকে আলাদা করে তুলবে। যেমন ধরুন বিশ্বের সকল বিষয় সর্ম্পকে আপনার ভেতরে খুঁটিনাটি জ্ঞান থাকা লাগবে।
নমনীয়তা থাকতে হবে
যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া এবং সবার সাথে সম্পূর্ন আচরণই হল নমনীয়তা। একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে অবশ্যই আপনার ভেতরে এই গুণটি থাকতে হবে।
কেননা আপনি যদি যে কোনো পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়েন তাহলে কোন সময়ে আপনি উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হতে পারবেন না। আর এটা একজন উদ্যোক্তা হওয়ার সব থেকে বড় গুণ।
বিচক্ষণতা থাকতে হবে
সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ায় হলো বিচক্ষণতা। উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার এই গুণটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।তাই যদি সফল উদ্যোক্তা হতে চান তাহলে আপনার ভেতর এই গুণটি অবশ্যই থাকতে হবে।
ধৈর্য এবং কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে
যেকোনো কাজে আপনাকে সফলতা অর্জন করতে হলে অবশ্যই ধৈর্য্য থাকা লাগবে। সফলতা অর্জনের জন্য ধৈর্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি হাতিয়ার। তেমনি সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ধৈর্য এবং কাজ করার মানসিকতা এই গুণটি আপনার ভেতর থাকতে হবে। এই গুণটি যদি আপনার ভিতর না থাকে তাহলে কোনভাবেই এই কাজে সফল হতে পারবেন না। তাই আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা হতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার ভেতর এই গুণগুলো রাখার চেষ্টা করবেন।
আমাদের শেষ কথা
আশা করি আজকের আর্টিকেলটি যারা পড়েছেন তারা উদ্যোক্তা কি এবং কিভাবে একজন সফল উদ্যোক্তা হবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝতে পেরেছেন। তার পরেও যদি এই সম্পর্কিত বিষয়ে আপনাদের কোনো ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা আপনার প্রশ্নটির উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আর পোস্ট টি পড়ে যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।